কেন ছাঁটাই আনন্দবাজারের দু’নম্বর পদাধিকারী! সার্কুলেশন কমে যাওয়া? না অন্য কোনও কারণে সরানো হল শিউলি বিশ্বাসকে? জল্পনা
আনন্দবাজার পত্রিকায় ছাঁটাই পর্ব অব্যাহত। এবার সরিয়ে দেওয়া হল আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শিউলি বিশ্বাসকে। ২০১৭ সালের শেষ থেকে আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীতে যে ছাঁটাই অভিযান শুরু হয়েছিল, সেই সময় হিউম্যান রিসোর্স বা এইচ আর ডিপার্টমেন্টের প্রধান ছিলেন শিউলি বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার তাঁকেই ছাঁটাই করে দিল কর্তৃপক্ষ।
২০১৭ সালের শেষ থেকে ২০১৮ র শুরু পর্যন্ত আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রথমবার ব্যাপকভাবে কর্মী সংকোচন শুরু হয়। এবছরের মে এবং জুন মাসে করোনা ও আমপান পর্বে ফের বেনজিরভাবে কর্মী ছাঁটাই শুরু করে আনন্দবাজার কর্তৃপক্ষ। দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকার দুটি এডিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। মে মাসের শেষে সংস্থা থেকে ইস্তফা দেন আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। সংস্থায় যে ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের মতবিরোধ হয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন তাঁর স্ত্রী এবং আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন কর্মী মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এবার কেন শিউলি বিশ্বাসকে এত গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যত সংস্থার দু’নম্বর পদ থেকে আচমকা সরিয়ে দেওয়া হল তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
সূত্রের খবর, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শিউলি বিশ্বাসের হাতেই ছিল সার্কুলেশন বিভাগের দায়িত্ব। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে অন্যান্য সমস্ত সংবাদপত্রের মতোই আনন্দবাজার পত্রিকারও সার্কুলেশন অনেকটাই কমে যায়। বর্তমান পত্রিকা যে আনন্দবাজারের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে তাও সম্প্রতি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টরস মিটিংয়ে (MD MEETING) স্বীকার করে নেন শিউলি বিশ্বাস। প্রতি বছর আনন্দবাজার গোষ্ঠীর যে এমডি মিটিং হয় তা কিছুদিন আগেই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট শিউলি বিশ্বাস জানিয়েছিলেন, বর্তমানের সার্কুলেশন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কমেছে আনন্দবাজার।
________________________________________________________________________________________
আরও পড়ুনঃ আনন্দবাজারে কর্মী ছাঁটাইয়ের থেকেও সম্পাদকের ইস্তফা কেন সূর্যকান্ত মিশ্রর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
_________________________________________________________________________________________
তবে পত্রিকার সার্কুলেশন কমে যাওয়া, নাকি সংস্থার দু’নম্বর পদাধিকারীকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকার অন্দরে। বিশেষ করে তিনি এইচ আর ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে থাকার সময় সংস্থায় লাগাতার যে ছাঁটাই হয়েছিল, তাতে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলেই মনে করেন অনেকে। এই ছাঁটাই পর্ব এখনও অব্যাহত। তা নিয়েও কর্তৃপক্ষ তাঁর ওপর রুষ্ট হয়ে থাকতে পারে বলে জল্পনা।
পাশাপাশি, আরও একটি জল্পনা উঠে আসছে শিউলি বিশ্বাসের ছাঁটাই প্রসঙ্গে। কাগজের সার্কুলেশন কমে যাওয়ার পাশাপশি, সল্টলেকে যেখানে বিভিন্ন ম্যাগাজিন ছাপার কাজ হয়, সেই নবমূদ্রণ প্রেসের আয় সম্প্রতি ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছে বলে খবর। নবমুদ্রণ প্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পদাধিকারীকে সরিয়ে দেওয়ার পর তা কার্যত লোকসানে যেতে শুরু করে। এই প্রেসের ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গেও শিউলি বিশ্বাসের ছাঁটাইয়ের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
সব মিলে এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টের মতো এত বড় পদাধিকারীকে কার্যত একদিনের নোটিসে ইস্তফা দিতে বাধ্য করায় সংস্থার অন্দরে রীতিমতো চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে।
Comments are closed.