স্বর্ণযুগের একের পর এক বাংলা ছবির দাপুটে তারকাদের প্রয়াণ ঘটেছে কিন্তু থেকে গিয়েছে কিংবদন্তিদের রেশ, তাঁদের মধ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, স্বাতীলেখা, মনু মুখার্জী উল্লেখযোগ্য। বাংলা ছবিতে যাঁদের হাত ধরে এক উজ্জ্বল দিনের সূচনা হয়েছিল। সৌমিত্র ও স্বাতীলেখা অভিনীত শেষ ছবি ‘বেলাশুরু’-র ট্রেলার লঞ্চ হলো কিছুদিন আগে যেখানে দুই মহারথীকে সম্মান জানাতে শিবপ্রসাদ ও নন্দিতা রেখেছিলেন দুটি প্রতীকী চেয়ার। সমস্ত দর্শকেরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। আবার এক সন্ধিক্ষণ আসতে চলেছে যেখানে আর এক প্রতিভাধর অভিনেতার শেষ অভিনয়ের সাক্ষী হতে চলেছি আমরা। মনু মুখার্জী অভিনীত শেষ ছবি ‘ভটভটি’ খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি পেতে চলেছে। যিনি আর এই পৃথিবীতে নেই তাঁর ছবি দেখতে দেখতে আবারও চোখে জল আসবে অনুরাগীদের।
‘ভটভটি’-র শুটিং শেষ হয়েছিল ২০১৯ সালে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর মৃত্যুর পরেই মনু বাবু ২০২০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন। একজন পরিচালক হিসেবে ‘ভটভটি’-র পরিচালক তথাগত মুখার্জী জানিয়েছেন, মনু বাবু এত বার্ধক্যে দাঁড়িয়ে ঠিক কতটা তারুণ্যে ভরপুর ছিলেন। মনুবাবু নব্বইয়ের কোঠায় দাঁড়ানোর পরেও তাঁর শরীরে সেভাবে কোনো সীমাবদ্ধতা ছিলনা। বাকিদের তুলনায় তিনি এই বয়সে দাঁড়িয়েও অনেক বেশি তারুণ্যে ভরপুর ছিলেন। দীর্ঘ তিন মাস ধরে চলেছিল ছবির রিহার্সাল। ফিল্মের খুঁটিনাটি যাবতীয় মনু বাবু নিজে একজন এত দক্ষ অভিনেতা হয়েও তথাগত র থেকে জেনে নিয়েছিলেন।
তথাগতর মনে প্রশ্ন জেগেছিল, মনু বাবু এত বিনয়ী ছিলেন বলেই হয়তো তিনি অভিনয় জগতে নিজেকে একজন প্রকৃত অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন। তথাগত আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন, বাংলা ছবির জগতে কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রসায়ন জনিত কারনে র কারণে হয়তো তিনি নিজেকে সঠিক ভাবে আত্ম প্রকাশ করে উঠতে পারেননি। জাহাজপট্টির বাসিন্দা এক বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ছবিতে তিনি।
তথাগতর মতে এই ছবিতে সবথেকে বড়ো উপহার হলো, প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় মনু মুখার্জীর উচ্ছাসিত হয়ে নাচ। বাড়িতে ধূমপান বারণ ছিল মনু বাবুর। তিনি সেটা তথাগতর থেকে সিগারেট চাইতেন কিন্তু পরিচালক একেবারে কড়া অভিভাবকের মতোই শাসন করতেন। ‘ভটভটি’ ছবি এবার মুক্তি পেতে চলেছে কিন্তু কিংবদন্তি মানুষটাই চলে গিয়েছে, নিজের শেষ ছবি না দেখেই চলে যেতে হলো তাঁকে।
View this post on Instagram
Comments are closed.