মায়ানমারে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সংস্থার সঙ্গে চুক্তি আদানি গোষ্ঠীর

মায়ানমারে সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘনিষ্ঠ শিল্প সংস্থা আদানি গোষ্ঠীর!
দ্য গার্ডিয়ানে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্প্রতি মায়ানমারের সেনা বাহিনী নিয়ন্ত্রিত হোল্ডিং কোম্পানির সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর ২৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের তদন্তকারীরা মায়ানমারের এই সেনা বাহিনীকেই সংগঠিত গণহত্যায় অভিযুক্ত বলে জানিয়েছিল।
ভারতীয় বিজনেস জায়ান্ট আদানি গোষ্ঠীর নাম আগেও একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার উত্তর কুইন্সল্যান্ডে কারমাইকেল কয়লা প্রকল্প নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক হয়। সে’দেশের নির্বাচনেও মূল ইস্যু হিসেবে উঠে আসে আদানি গোষ্ঠীর প্রকল্প।


পড়ুনঃ অস্ট্রেলিয়াতে আদানিদের কয়লা খনির পরিবেশগত ছাড়পত্র ফের বাতিল করল কুইন্সল্যান্ড প্রশাসন, প্রকল্প বিশবাঁও জলে


দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত এপ্রিলেই মায়ানমারের রাজধানী রেঙ্গুনে একটি কন্টেনার পোর্ট তৈরির ছাড়পত্র পায় আদানি গোষ্ঠী। কিন্তু যে জমিতে বন্দর নির্মাণ করবে আদানি গোষ্ঠী, সমস্যা তার মালিকানা নিয়েই। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই জমির মালিক মায়ানমার ইকনমিক কর্পোরেশন। যা আবার সরাসরি মায়ানমার সেনা বাহিনী দ্বারা পরিচালিত।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার কর্মী তথা আইনজীবী ক্রিস সিডোটি অসংখ্যবার মায়ানমারে গিয়েছেন। সেই তদন্তকারী দলের চূড়ান্ত রিপোর্টে সরাসরি রোহিঙ্গা গণহত্যায় দায়ী করা হয়েছিল সে দেশের সেনা বাহিনীকে। পাশাপাশি মায়ানমার আর্মির সিনিয়র অফিসারদের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংগঠিত করার জন্য কড়া শাস্তিরও সুপারিশ করেছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘের তদন্তকারী দলটি। ২০১৮ সালে সেই রিপোর্ট প্রকাশ পাওয়ার পর, রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন রাখা হয়েছিল, মায়ানমার সেনা কিংবা তার অধীনস্থ সংস্থাগুলোর সঙ্গে কোনও ধরনের বাণিজ্যিক যোগ যেন না রাখা হয়।
ক্রিস সিডোটির মতে, অস্ট্রেলিয়ার কারমাইকেল খনি থেকে আদানিরা কয়লা তুলে তা নিয়ে আসবে মায়ানমারে। তারপর সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী তা সরবরাহ করা হবে বিশ্বে। অর্থাৎ, অস্ট্রেলিয়ার খনি থেকে তোলা কয়লার লাভের অংশ সরাসরি পৌঁছবে মায়ানমার ইকনমিক কর্পোরেশনের ঘরে। যা রাষ্ট্রসঙ্ঘের আবেদনের পরিপন্থী, বলছেন ক্রিস। এমইসির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তির কারণে আদানিরা অস্ট্রেলিয়াতে আর ব্যবসা করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ক্রিস।
১৯৯৭ সালে তৈরি হওয়া মায়ানমার ইকনমিক কর্পোরেশন বা এমইসি সে দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি সংস্থা, যা সরাসরি সেনা বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত। ফলে সাধারণ মানুষের এর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার অবকাশ প্রায় নেই বললেই চলে। অতীতে বহুবার সংস্থাটির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে।

Comments are closed.