নির্ধারিত মাত্রার বেশি দূষণ আদানি পাওয়ার প্ল্যান্টে, বাড়িয়ে দেওয়া হল দূষণের ঊর্ধ্বসীমা, প্রতিবেদন প্রকাশ thewire এ
দূষণ নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো নিয়ে বিতর্ক আজকের নয়। কিন্তু মূলত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আপত্তিতে এতদিন তা বাড়ানো যায়নি। সম্প্রতি ৪ টি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৭ টি ইউনিট সরেজমিনে পরিদর্শনের পর দেখা যায় তারমধ্যে ৫ টি ইউনিটই নির্ধারিত সীমার মধ্যে দূষণ নির্গমন করছে। কেবলমাত্র আদানি পাওয়ারের ২ টি ইউনিটের নির্গমনের মাত্রা নির্ধারিত সীমার উপর। ঘটনাচক্রে এই রিপোর্টের পরই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আপত্তি উড়িয়ে মাত্রা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পরিবেশ মন্ত্রক। বৃহস্পতিবার এমনই বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে নিউজ পোর্টাল thewire।
নাইট্রোজেন অক্সাইড। ভারতের মতো দেশে বায়ু দূষণের অন্যতম কুশীলব। চিকিৎসকেরা বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার নেপথ্য কারণ এই নাইট্রোজেন অক্সাইড দূষণ। এখানেই শেষ নয়, দীর্ঘ সময় এই দূষণের মধ্যে কাটালে ফুসফুসের গুরুতর রোগের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। গাড়ি থেকে বেরোনো ধোঁয়ার পর ভারতে নাইট্রোজেন অক্সাইড দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ কয়লা চালিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। এবছর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টে নাইট্রোজেন অক্সাইড দূষণের ক্ষেত্রে ভারতের কয়লাচালিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ভারতে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে নাইট্রোজেন অক্সাইডের দূষণমাত্রা নির্ধারিত করা আছে। কিন্তু সেই মাত্রা বৃদ্ধি করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সঙ্গে বিরোধ চলছে সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের (সিপিসিবি)। বিদ্যুৎ মন্ত্রক দীর্ঘদিন ধরেই এই মাত্রা ৩০০ mg/Nm3 থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ mg/Nm3 করার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু প্রতিবারই তাতে বাদ সেধেছে সিপিসিবি। ফলে দূষণ মাত্রার বদল হয়নি। কিন্তু নিউজ পোর্টাল thewire.in এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবছরের ১৭ ই মে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রক দূষণ সীমা বৃদ্ধির জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে বৈঠকে, তার সভাপতিত্ব করেন খোদ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব রীতেশকুমার সিংহ।
প্রতিবেদন বলছে, এই বৈঠকের আগে সিপিসিবি একটি পর্যবেক্ষক দল পাঠায় ৪ টি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৭ টি ইউনিটে। হাতে কলমে দূষণ মাত্রা মাপার পর পর্যবেক্ষক দল ২ রা মে পরিবেশ মন্ত্রকে একটি মনিটরিং রিপোর্ট পেশ করে। তাতে দেখা যায়, ৭ টি ইউনিটের মধ্যে মাত্র ২ টি ইউনিট নির্ধারিত সীমার (৩০০ mg/Nm3) উপরে নাইট্রোজেন অক্সাইড দূষণ করছে। আর সেই ২ টি ইউনিটই আদানি পাওয়ার রাজস্থান লিমিটেডের। এই মনিটরিং টিমে সিপিসিবির প্রতিনিধিদের সঙ্গেই ছিলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (সিইএ) আধিকারিকরাও।
thewire.in এর প্রতিবেদন বলছে, সিপিসিবি এবং সিইএর মনিটরিং রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে আদানি পাওয়ার প্ল্যান্টের দুটি ইউনিট থেকে দূষণের মাত্রা যথাক্রমে ৫০৯ mg/Nm3 এবং ৫৮৪ mg/Nm3। যা সরকার নির্ধারিত সীমার চেয়ে বহুগুণ বেশি। অন্যদিকে বাকি ৫ টি ইউনিটের দূষণের মাত্রা ঘোরাফেরা করছে ২০০-৩০০ mg/Nm3 এর মধ্যে।
এবিষয়ে thewire.in এর তরফে যোগাযোগ করা হয় আদানি পাওয়ারের সঙ্গে। তারা জানিয়েছে, বর্তমানে লাগু থাকা সমস্ত নিয়ম এবং সরকার নির্ধারিত সীমা মেনে কাজ করা হয়। সিপিসিবির নির্দেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে পরিবেশ দূষণ রোধ সংক্রান্ত সমস্ত নির্দেশ পালন করা হবে।
২০১৫ সালের ৭ ই ডিসেম্বর পরিবেশ মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায় ২০০৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে চালু হওয়া থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য দূষণ নির্গমণের সর্বোচ্চ সীমা হবে ৩০০ mg/Nm3। কিন্তু বিদ্যুৎ মন্ত্রক এতে আপত্তি জানায়। তা নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছিলই। এই প্রেক্ষিতে গত ১৭ ই মে ২০১৯ পরিবেশ মন্ত্রক নাইট্রোজেন অক্সাইড নির্গমণের সীমা ৩০০ mg/Nm3 থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ mg/Nm3 করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
thewire.in এর প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ১৭ ই মের বৈঠকে হাজির ছিলেন বিদ্যুৎ মন্ত্রক, সিপিসিবি, এনটিপিসি এবং পরিবেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা। তবে নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পরিবেশ এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রকের সচিবরা।
Comments are closed.