বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব লকডাউনে আকাশে তালা। বন্ধ বিমান পরিষেবা। মাঝেমাঝে কেবল পণ্যবাহী বিমানের ওঠানামা। কিন্তু যাত্রী পরিবহণ সম্পূর্ণ বন্ধ। কবে উড়বে প্লেন, উত্তর নেই কারও কাছে। এই অবস্থায় আরও একটি দুঃসংবাদ কি অপেক্ষা করছে ডানা মেলার? এবার কি পাততাড়ি গোটাতে চলেছে এয়ার এশিয়া? সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে ইঙ্গিত তেমনই।
বিশ্বে কোন বিমান পরিবহণ সংস্থার রেটিং কেমন, তা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বাইবেল মানা হয় স্কাইট্র্যাক্সকে। সেই সংস্থার বেস্ট লো কস্ট ক্যারিয়ার তকমা একটানা ১১ বছর ধরে দখল করে আসছে এয়ার এশিয়া। বিন্দুকে সিন্ধুতে পরিণত করেছেন টোনি ফার্নান্ডেজ আর তাঁর বন্ধু কামারুদ্দিন মেরানুন, চুম্বকে এটাই এয়ার এশিয়ার সাম্রাজ্য। কিন্তু প্রবল মুনাফায় চলা এয়ার এশিয়ার আকাশে কালো মেঘ ডেকে আনে কোভিড ১৯। লকডাউনে সম্পূর্ণ বসে যায় সংস্থার প্রায় ২৫০ প্লেন। খরচ সামলাতে সেই সময় ২৩ হাজার কর্মীর ৭.৫ শতাংশ ছাঁটাই করে। সমস্ত লেনদেন বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তাও লোকসান এড়ানো যায়নি।
গত সপ্তাহে প্রকাশিত এই অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক বা প্রথম তিন মাসে সংস্থার লোকসান হয়েছে ১৮৮ মিলিয়ন ডলার। যা সংস্থার ইতিহাসে সর্বকালীন রেকর্ড। ব্যবসা কমছিল ঠিকই কিন্তু এরকম নাটকীয় পতন অপ্রত্যাশিত। মার্কিন অডিট বহুজাতিক আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং বলছে, সমস্যা সমাধানে বাইরে থেকে নগদ ঢোকানোর পথেই যেতে হবে এয়ার এশিয়াকে। পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছে, ভবিষ্যতে কী হতে পারে তার হদিশ না থাকলে বিনিয়োগকারী পাওয়া যাবে কী করে?
এই অবস্থায় আরও একটি বিমান সংস্থাকে ডকে ওঠা আটকাতে বেশ কিছু দাওয়াই বাতলে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। টোনি ফার্নান্ডেজের হাত ধরেই ৬ দশক পর আবার বিমান ব্যবসায় ফিরে এসেছিল ভারতের টাটা সন্স। আজ যখন সংস্থা বিপদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার হাতে থাকা ৪৯ শতাংশ শেয়ারের কিছুটা টাটা সন্সকে বিক্রি করলে সাময়িক সমস্যা সমাধান সম্ভব।
৯/১১ এর পর পরই মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে বিপুল লোকসানে চলা বিমান সংস্থা কিনে নেন টোনি ফার্নান্ডেজ। ২০০১ সালে দুটি বয়সের ভারে জর্জরিত বোয়িং বিমান এবং ২০০ জন কর্মী দিয়ে শুরু হয় এয়ার এশিয়ার পথ চলা। এক বছরের মধ্যে প্রথম লাভের মুখ দেখেন টোনি। মাত্র ৫ বছরের মধ্যে সংস্থার নিজস্ব বিমানের সংখ্যা বেড়ে হয় ৬৮। কর্মী সংখ্যা ৫ হাজার। ২০০৭ সালে এয়ার এশিয়া একা ২৩ মিলিয়ন যাত্রীকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। যা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস, থাই এয়ারওয়েজ, এমিরেটস কিংবা ক্যাথে প্যাসিফিকের যাত্রী সংখ্যার চেয়েও বেশি।
ভারতের ওভারসিজ সিটিজেন টোনি ফার্নান্ডেজ এয়ার এশিয়ার শেয়ার বিক্রির ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও, তিনি আশাবাদী, এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে সংস্থা।
Comments are closed.