সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে তোলপাড় দেশ। আর সেই আন্দোলনে একেবারে প্রথম সারিতে বামপন্থীরা। দীর্ঘদিন পর ফের গণআন্দোলনের প্রথম সারিতে উঠে এলেন বামেরা। আন্দোলনের দায়ে যোগী আদিত্যনাথ জেলে পাঠিয়েছেন সিপিএমের গোটা বারাণসী শহর কমিটিকেই। কোন মন্ত্রে ফের পথে নামানো গেল বামপন্থীদের?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই আপাত অসাধ্য সাধন হয়েছে আন্দোলনের পুরোভাগে পড়ুয়াদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কারণেই। কানহাইয়া কুমার থেকে শুরু করে দীপসীতা ধর, বামপন্থী পড়ুয়া নেতা-নেত্রীরা কার্যত নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশজোড়া সিএএ বিরোধী আন্দোলনের। সেই সঙ্গে রয়েছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশি ঘোষ। দেশে বাম আন্দোলনকে পরের স্তরে উত্তরণের নেপথ্যে যাঁর নাম না করলেই নয়, তিনি এসএফআই নেত্রী ঐশী ঘোষ। দুর্গাপুরের এই মেয়েই এই মুহূর্তে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম মুখ।
জেএনইউতে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পর ঐশী ঘোষ এখন দেশজোড়া নাম। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিক্ষোভ, গণআন্দোলন, ডাক পড়ছে জেএনইউয়ের পড়ুয়া সংসদের প্রেসিডেন্টের। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি তিনভাষায় সাবলীল ঐশীর জনপ্রিয়তা যে গত এক মাসে কোন উচ্চতায় পৌঁছেছে, তা বোঝা যাবে একটি ছোট্ট উদাহরণ দিলেই।
সোশ্যাল মিডিয়া ট্যুইটারে বাংলা সিপিএমের সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের ফলোয়ার সংখ্যা ৪৮.৪ হাজার। সূর্যবাবু ট্যুইটারে যোগ দিয়েছেন ২০১৫ সালের নভেম্বরে। আরেক পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিমের ফলোয়ার ৪৮.৭ হাজার, তিনি ট্যুইটার হ্যান্ডেল খুলেছিলেন ২০১১ সালের জুনে। রাজ্যের এই দুই নেতারই সর্বোচ্চ ফলোয়ার। এই দুজনের চেয়ে সামান্য পিছিয়ে ২০১৪ সালের মার্চে ট্যুইটারে অ্যাকাউন্ট খোলা বিধায়ক তথা সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর ফলোয়ার ৪৬.২ হাজার। এবার চোখ ফেরানো যাক জেএনইউএসইউয়ের প্রেসিডেন্টের দিকে। ২০১৭ সালের জুন মাসে ট্যুইটারে যোগ দেওয়া ঐশীর ফলোয়ার ৪৭.১ হাজার। অর্থাৎ, বাংলায় সর্বাধিক ফলোয়ার সম্পন্ন মহম্মদ সেলিম ও সূর্যকান্ত মিশ্রের কার্যত ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন দুর্গাপুরের মেয়ে। অথচ, ট্যুইটারে সবচেয়ে নতুন ঐশীই। ইতিমধ্যেই ঐশীর চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতা। ট্যুইটার ফলোয়ারে ছাত্র সংগঠন তো দূর অস্ত, সিপিএমের রাজ্যের কোনও নেতাই ঐশীর ধারেকাছে নেই।
রাজ্যস্তরে ঐশী সূর্যকান্ত, সেলিমদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন ঠিকই, কিন্তু জাতীয় স্তরে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। ইয়েচুরি ফলো করেন কেবলমাত্র তাঁর দলের ট্যুইটার হ্যান্ডেল আর ইয়েচুরিকে ফলো করেন ৮৭১.৬ হাজার নেটিজেন। যে মাইলফলক পেরোতে ঐশীকে আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে যেভাবে মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, চোট-আঘাতকে হেসে উড়িয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ইয়েচুরিকে ছুঁয়ে ফেলাও অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা। আপাতত দুর্গাপুরের মেয়ের বাংলার তাবড় নেতাদের ট্যুইটার ফলোয়ারে টপকে যাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
Comments are closed.