ইস্তফাই দিতে বাধ্য হলেন একাধিক মহিলাকে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত প্রাক্তন সাংবাদিক এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবর
ভারতে ‘মি টু’ মুভমেন্টের প্রথম ধাক্কা। আর এই ধাক্কা সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর। একের পর এক মহিলার অভিযোগের জেরে প্রচণ্ড চাপের মুখে শেষমেশ ইস্তফা দিতেই বাধ্য হলেন প্রাক্তন সাংবাদিক, সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবর। অথচ দুদিন আগেই নাইজেরিয়া থেকে দেশে ফিরে আকবর জানিয়েছিলেন, পদত্যাগ তিনি করবেন না। তাঁর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে এবং সাজানো। শুধু তাই নয়, সাংবাদিক প্রিয়া রামানি তাঁর নামে যৌন হেনস্থা এবং অভব্য আচরণের মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন, এই মর্মে সোমবার আদালতে রামানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানি মামলাও করেছিলেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। তার দু’দিনের মধ্যেই প্রিয়া রামানির পাশে দাঁড়িয়ে ২০ জন মহিলা সাংবাদিক পালটা মুখ খুলেছেন আকবরের বিরুদ্ধে।
দীর্ঘ ১৫ বছর এশিয়ান এজ সংবাদপত্রের এডিটরের দায়িত্বে ছিলেন এম জে আকবর। এই মহিলা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ওই ১৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে প্রিয়া রামানি একা নন, আকবরের যৌন হেনস্থা ও অভব্যতার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদেরও। আদালতে পালটা আবেদনে এই মহিলারা জানিয়েছেন, প্রিয়ার বিরুদ্ধে আকবরের মানহানির মামলার শুনানি চলাকালীন আদালত তাঁদের কথাও শুনুক। আকবরের বিরুদ্ধে তাঁদের বলার আছে।
এক বিবৃতিতে এই ২০ জন মহিলা সাংবাদিক জানিয়েছেন, আকবরের এভাবে আদালতে যাওয়ায় প্রমাণিত, তিনি তাঁর কৃতকর্মের জন্য এতটুকু দুঃখিত নন বা অনুশোচনা বোধ করছেন না। তাই এবার আদালতে জোটবব্ধভাবে তাঁরা বিদেশ প্রতিমন্ত্রীর মামলা বিরুদ্ধে লড়বেন। শুধু তাই নয়, আকবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে চিঠিও দিয়েছেন।
এর আগে আকবরকে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, ইস্তফার কথা উড়িয়ে দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। এমনকী সামনে সাধারণ নির্বাচন আসছে বলে রাজনৈতিক কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। কংগ্রেস এবং সিপিএম তাঁর ইস্তফা দাবি করেছিল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আকবর আর চাপ রাখতে পারলেন না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, একের পর এক মহিলা সাংবাদিক যেভাবে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন তা শুধু তাঁর জন্যই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষেও রীতিমতো অস্বস্তি তৈরি করেছে। বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।
সম্প্রতি, প্রিয়া রামানি নামে এক সাংবাদিক গত মঙ্গলবার অভিযোগ করেছিলেন, ১৯৯৪ সালে মুম্বইয়ের একটি হোটেলে ইন্টারভিউ এর নামে ডেকে তাঁর সাথে অসভ্য আচরণ করেন এম জে আকবর। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ২৩ বছর আর আকবরের ৪৩। লবির বদলে ওই মহিলা সাংবাদিককে হোটেলের রুমে যেতে বলেন আকবর। সেখানে মহিলাকে মদ্যপানের প্রস্তাব দেন তিনি। প্রিয়ার দাবি, তিনি মদ খেতে অস্বীকার করলে আকবর গুণগুণিয়ে পুরনো দিনের গান গাইতে শুরু করেন ও তাঁকে পাশে গিয়ে বসতে বলেন। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘মি টু’ মুভমেন্ট চলাকালীন বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ভোগ’এ একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন প্রিয়া। সেখানেও এই ঘটনার বিবরণ দিয়ে, অভিযুক্তকে ‘নিজের বস’ বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কিন্তু কারোওর নাম তখন তিনি নেননি। নাম প্রকাশ্য আনলেন সম্প্রতি।