‘নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য অমর্ত্য সেন যুক্ত ছিলেন দুর্নীতি ও স্বজনপোষণে’, টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাংবাদিকের ট্যুইট ঘিরে বিতর্ক। ট্যুইটের তথ্য মিথ্যেঃ alt news
‘নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য থাকাকালীন বিপুল আর্থিক দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণে যুক্ত ছিলেন নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় এসে হাতেনাতে ধরে ফেলেন তাঁর সমস্ত দুর্নীতি। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় অমর্ত্য সেনকে। তারপর থেকেই মোদীকে অকারণ সমালোচনায় বিদ্ধ করছেন অমর্ত্য সেন’। সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাংবাদিক ভারতী জৈনের এই সংক্রান্ত একের পর এক ট্যুইটে সম্প্রতি চাঞ্চল্য ছড়ায় দেশে।
কিন্তু সত্যিই কি দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন অমর্ত্য সেন? দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ ধরা পড়ে যাওয়াতেই কি ‘চৌকিদার’ মোদীর বিরুদ্ধে খড়গহস্ত শেষ বাঙালি নোবেলজয়ী? কোন সূত্রে এই খবর পেলেন সাংবাদিক? জবাবে ভারতী জৈন জানান, তিনি সরকারি সূত্র থেকে এই খবর পেয়েছেন। এই নিয়ে যখন উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া, ঠিক তখনই নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে সবকটি ট্যুইট ডিলিট করেন সাংবাদিক ভারতী জৈন, যা নিয়ে নতুন করে শুরু হয় জল্পনা।
সর্বভারতীয় নিউজ পোর্টাল alt news এর ফ্যাক্ট চেকিংয়ে বেরিয়ে এসেছে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ইন্টারনাল সিকিউরিটি এডিটর ভারতী জৈনের ট্যুইটের সত্যাসত্য।
ভারতী জৈন জানিয়েছেন, তিনি সমস্ত খবরই পেয়েছেন সরকারি সূত্র থেকে। কিন্তু সরকারি তরফে তাঁর এমন ট্যুইটের তথ্যের সত্যতা অস্বীকার করা হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, সম্প্রতি এই অভিযোগগুলিই হোয়াটসঅ্যাপে কোনও সূত্রের উল্লেখ ছাড়াই প্রচারিত হচ্ছে। হুবহু সেই তথ্য সরকারি সূত্রের নাম দিয়ে ট্যুইট করার নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক অঙ্ক নেই তো? নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ সম্পর্কে মিথ্যে তথ্য প্রচার করার নেপথ্যে একজন সাংবাদিকের কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে, উঠতে শুরু করেছে এই প্রশ্ন। ট্যুইট করার পর তা ডিলিট করার কারণ কী হতে পারে? সাংবাদিক ভারতী জৈনের নীরবতা এই বিষয়ে জল্পনা আরও তীব্র করেছে।
ট্যুইটে এক জায়গায় ভারতী জৈন অভিযোগ করেছিলেন, অমর্ত্য সেন মাসে ৫ লক্ষ টাকা বেতন ছাড়াও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেতেন। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, যতবার খুশি বিশ্বের যে কোনও দেশে ঘোরার ছাড়পত্র। সত্যিটা কী? নোবেলজয়ী এবং এই সম্পর্কিত সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পর alt news জানাচ্ছে, অমর্ত্য সেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হয়েছেন সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে। এই সাম্মানিক পদে থাকতে তিনি একটি টাকাও নেননি। আর তিনি নোবেল পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁকে বিশ্বের যে কোনও জায়গায় যাওয়ার জন্য একটি বিশেষ পাস উপহার দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও যোগ নেই।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের। সাংবাদিক ভারতী জৈন একটি ট্যুইটে অভিযোগ করেন, এই সখ্যতা কাজে লাগিয়েই নাকি অমর্ত্য মনমোহন সিংহের সন্তানদের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। alt news জানাচ্ছে, এই অভিযোগও একশো শতাংশ মিথ্যে। অমর্ত্য সেন alt news কে জানিয়েছেন, মনমোহন সিংহের সন্তানদের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার যোগ্যতা রয়েছে, কিন্তু তাঁরা কোনওদিন এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। অমর্ত্য সেন আরও জানিয়েছেন, মনমোহন সিংহের সন্তানরা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে এলে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় উপকৃতই হোত।
পাশাপাশি alt news জানাচ্ছে, মোদী সম্পর্কে অমর্ত্য সেনের সমালোচনা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরুর বহু আগে থেকেই। তাই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরে যাওয়ার পরই মোদীর সমালোচনা শুরু হয়েছে, ভারতী জৈনের এই দাবিও ভুয়ো। বরাবরই নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক মডেলের কড়া সমালোচক অমর্ত্য সেন। স্বভাবতই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর তা বেড়েছে।
ভারতী জৈন নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে ট্যুইট ডিলিট করে দিয়েছেন বটে। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে ঘোরা এই মিথ্যে তথ্য এখন প্রচারিত হচ্ছে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাংবাদিক ভারতী জৈনকে উদ্ধৃত করেই।
Comments are closed.