জমি বিতর্কে আইনি পদক্ষেপ অমর্ত্য সেনের, কড়া চিঠি উপাচার্যকেও
নতুন নতুন মিথ্যা সাজিয়ে নিজেদের অপরাধবোধ বৃদ্ধি করবেন না, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে করা চিঠি নোবেলজয়ীর
বিশ্বভারতী-জমি বিতর্কে এবার আইনি পদক্ষেপ করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে পাঠানো আইনি নোটিসে তাঁর বাড়ি ‘প্রতীচী’র জমি সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করে তা খতিয়ে দেখার আবেদন করেছেন অমর্ত্যবাবু। সেই সঙ্গে বিশ্বভারতীতে অবৈধ ভাবে জমি দখল রাখা নিয়ে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ করেছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর অমর্ত্য সেনের ‘প্রতীচী’র জমি সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ ছিল, বিশ্বভারতীর জমি দখল করে রেখেছে অমর্ত্য সেনের পরিবার। সেই অভিযোগ আগেই নস্যাৎ করেছিলেন অমর্ত্য সেন। এবার উপাচার্যকে ওই মন্তব্য প্রত্যাহার করার আবেদন জানালেন তিনি।
অমর্ত্যবাবুর হয়ে ‘স্যান্ডার্সন অ্যান্ড মর্গ্যান’-এর আইনজীবী বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে এই বিষয়টি জানিয়েছেন। একই কথা উল্লেখ করে উপাচার্যকে আলাদা করে একটি চিঠিও লিখেছেন অমর্ত্যবাবু। তাতে তিনি লিখেছেন, আপনার (উপাচার্য) বিস্ময়কর অভিযোগের সমর্থনে কোনও যুক্তি দেখাতে পারেননি। এখন বলছেন, ১৯৪০ সালে আমার বাবা বিশ্বভারতীর কাছ থেকে যে জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ নিয়েছিলেন। তা মিলিয়ে দেখার জন্য আপনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে প্রতীচীর জমি মেপে দেখার অনুরোধ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমকি দিয়েছেন, অতিরিক্ত জমি দখল করে থাকলে, আইনি পদক্ষেপ করা হবে। অমর্ত্য বাবুর অভিযোগ, ৮০ বছরের পুরনো দলিলের এই ‘অপব্যবহারের’ উদ্দেশ্য খালি হয়রান করা কিংবা তারও বেশি কিছু।
চিঠিতে অমর্ত্যবাবু এও উল্লেখ করেন, যে জমি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, সেটি তাঁর বাবা বিশ্বভারতীর কাছ থেকে নয়, বাজার থেকে কিনেছিলেন। যা তাঁদের বসত জমির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এই কেনা জমির জন্য প্রতি বছর তিনি খাজনা ও পঞ্চায়েতের কর দিয়ে থাকেন তিনি। তাই লিজ়ের বাইরে অতিরিক্ত জমির খোঁজ মিললে আইনি পদক্ষেপের যে ‘হুমকি’ দিয়েছেন বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার, তা দুরভিসন্ধিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন অমর্ত্যবাবু।
পাশাপাশি উপাচার্য গত জুন মাসে অমর্ত্যবাবুর সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয় বলে যে দাবি করেছিলেন তা অস্বীকার করে, অমর্ত্যবাবু লিখেছেন, ‘আমি নাকি নিজেকে ভারতরত্ন বলে পরিচয় দিয়েছি, যা অকল্পনীয়।’ ওই মাস পুরোটাই তিনি বিদেশে ছিলেন বলে জানিয়েছেন অমর্ত্যবাবু। চিঠির শেষ অংশে তিনি লেখেন, নতুন নতুন মিথ্যা সাজিয়ে নিজেদের অপরাধবোধ বৃদ্ধি না করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উচিত আমার আইনজীবী যেমনটি বলেছেন, সেই মতো ‘মিথ্যা অভিযোগগুলি’ অবিলম্বে প্রত্যাহার করা।
এদিকে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী জানান, তাঁরা নিজেদের অবস্থানে অটল। অমর্ত্য বাবুর চিঠির প্রত্যুত্তর দেওয়া হবে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানান তিনি।
Comments are closed.