মন্দার ধাক্কায় টালমাটাল দেশের অর্থনীতি। সরকারি সহায়তা সত্ত্বেও বিনিয়োগের আকাশে ঘন কালো মেঘ। প্রবল ভাঁটার টান দেশের গাড়ি শিল্পে। চাহিদা বাড়ন্ত। ছাঁটাই হচ্ছেন হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। ধুঁকছে গ্রামীণ অর্থনীতি। সবমিলিয়ে পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে ভারতের অর্থনীতি। কিন্তু মন্দার তুফানকে হেলায় উড়িয়ে অপ্রতিরোধ্য দক্ষিণ মুম্বইয়ের অ্যান্টিলিয়ার বাসিন্দা।
গত এক যুগ ধরে দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম মুকেশ আম্বানী। সম্প্রতি প্রকাশিত ফোর্বসের ধনীতম ১০০ ভারতীয়ের তালিকায় দ্বাদশ বছরেও শীর্ষে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৫১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম নিয়ে কোনও সংশয় না থাকলেও, ফোর্বসের তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক গৌতম আদানি। গতবার তিনি ছিলেন দশম স্থানে। আর এক বছরের মধ্যে আমেদাবাদের শিল্পপতি ৮ ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে এসে থেমেছেন। সম্পদের অঙ্কে বিশাল ফারাক থাকলেও, এবার তাঁর সামনে কেবল রিলায়েন্স কর্ণধার মুকেশ আম্বানী। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী গৌতম আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৫৭ বছর বয়সী গৌতম আদানির এমন চোখ ধাঁধানো উত্থানের নেপথ্যে রয়েছে গত কয়েক বছর ধরে আদানি গোষ্ঠীর বিপুল ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ। পরিবারসূত্রে পাওয়া ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে মুকেশ আম্বানী এক যুগ ধরে দেশের সবচেয়ে বড়লোক। কিন্তু ১৯৮৮ সাল থেকে ব্যবসা শুরু করা গৌতম আদানির এমন চমকপ্রদ উত্থান ভারতের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে আদানি গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। সম্প্রতি দূষণ মাত্রা বাড়ানো নিয়ে বিতর্কে নাম জড়ায় আদানিদের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের। অভিযোগ, নির্ধারিত দূষণমাত্রা মানছিল না আদানি পাওয়ারের একাধিক ইউনিট। পরবর্তীতে সরকার নজিরবিহীনভাবে দূষণমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আদানি গোষ্ঠীর সুবিধার জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি বিদেশেও বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল আদানি গোষ্ঠী। যদিও সমস্ত বিতর্ককে পিছনে ফেলে গত জুনেই অস্ট্রেলিয়ায় কয়লা খনি চালানোর ছাড়পত্র আদায় করে নিয়েছেন গৌতম আদানি। ফোর্বসের সাম্প্রতিক ধনীদের তালিকায় এক লাফে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা, তারই প্রমাণ, এমনটাই মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
এদিকে ফোর্বসের তালিকায় আম্বানী-আদানির পরেই রয়েছে অশোক লেল্যান্ডের মালিক হিন্দুজা ভাইয়েরা, শাপুরজি-পালোনজি গোষ্ঠীর পালোনজি মিস্ত্রি, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের উদয় কোটাক, এইচসিএল টেকনোলজির শিব নাদার।
পাশাপাশি রয়েছেন এমন ৬ জন সুপার রিচ, যাঁরা এই প্রথম ফোর্বসের তালিকায় ঢুকলেন। তালিকায় দশম স্থানে রয়েছেন আদিত্য বিড়লা গ্রুপের কর্ণধার কুমারমঙ্গলম বিড়লা। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৯.৬ বিলিয়ন। ১৩ নম্বরে রয়েছেন ডাবরের মালিক বর্মন পরিবার। তাঁদের মিলিত সম্পত্তির পরিমাণ ৮.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৯ তম স্থানে রয়েছেন কলকাতার আরেক ব্যবসায়ী, শ্রী সিমেন্টের মালিক বেণুগোপাল বাঙুর। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৬.৩ বিলিয়ন ডলার, বলে জানাচ্ছে ফোর্বস।
Comments are closed.