দেশে যখন লকডাউন ক্রমশ উঠছে, তখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। শুরুতে যে করোনাভাইরাস মূলত শহরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল, ইদানীং তা গ্রামীণ ভারতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবে কার্যত তছনছ বাংলার দক্ষিণ অংশ। এই জোড়া বিপত্তির আবহে প্রায় ৩ মাসের নীরবতা ভেঙে বাংলা নিয়ে ওয়েব সমাবেশ করলেন বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাংলার মানুষকে সম্বোধন করতে গিয়ে অমিত শাহ নিয়ে এলেন নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গ। বুঝিয়ে দিলেন, আসন্ন বিধানসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির মূল হাতিয়ার সেই সিএএ-এনআরসিই।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বাংলার বিরোধিতা সর্বজনবিদিত। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পথে নেমেছেন একাধিকবার। আইনের বিরোধিতার সুর নিয়ে গিয়েছেন সর্বোচ্চ উচ্চতায়। সামিল করেছেন বাংলার নাগরিক সমাজকেও। সব মিলিয়ে কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইন বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে এই বাংলায়।
২০১৯ লোকসভার পর রাজ্যে হওয়া ৩ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও নাগরিকত্ব ইস্যুই প্রধান হয়ে উঠেছিল বলে মনে করেন অনেকে। এমনকী লোকসভার নিরিখে বহু ভোটে এগিয়ে থেকেও তৃণমূলের কাছে পরাজিত কালিয়াগঞ্জের বিজেপি প্রার্থী তা স্বীকারও করে নিয়েছিলেন। এই প্রেক্ষিতে নাগরিকত্ব আইন বা এনআরসি নিয়ে ধীরে চলোর নির্দেশ পৌঁছয় বঙ্গ বিজেপিতে। তারপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো দিন। করোনা, আমপান বিধ্বস্ত বাংলায় ফের নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি প্রসঙ্গ তুলে দিয়ে গেলেন অমিত শাহ। মমতাকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, সিএএ বিরোধিতার ফল বুঝবেন ভোটবাক্সে।
মঙ্গলবার ওয়েব মারফৎ বাংলার মানুষের কাছে নিজের বক্তব্য রাখেন অমিত শাহ। সেখানেই বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে উঠে আসে নাগরিকত্ব আইন প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তীব্র আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেন, দেশভাগের পর কোটি কোটি মানুষ পড়শি দেশ থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও ওই মানুষেরা পাননি কোনও আইনি অধিকার। প্রতিটি সরকার তাঁদের কেবল ভোটব্যাঙ্ক হিসেবেই দেখেছে, দাবি অমিত শাহের। নরেন্দ্র মোদী সেই বঞ্চিত মানুষদেরই নাগরিকত্ব দেওয়ার মধ্যে দিয়ে সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তারপরই প্রশ্নের সুরে অমিত শাহ বলে ওঠেন, মতুয়া, নমশুদ্ররা আপনার কী ক্ষতি করেছে, যে আপনি তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরোধিতা করছেন? আপনি প্রকাশ্যে বলুন, কী কারণে আপনি বিরোধিতা করছেন। অমিত শাহের মন্তব্য, আপনি সিএএ এর বিরোধিতা করছেন, ভোটবাক্স খুললে দেখতে পাবেন বাংলার মানুষ আপনাকেই রাজনৈতিক শরণার্থী করে দিয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতার ফল আপনি বুঝবেন।
করোনা পরিস্থিতি এবং পরিযায়ী শ্রমিক পরিবহণ নিয়েও মমতা সরকারের দিকে আক্রমণ শানাতে কসুর করেননি সদ্য প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। আমি শুনে অবাক হয়েছিলাম যে মমতা দিদি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনকে করোনা এক্সপ্রেস বলছেন। এই অপমান বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা ভুলবেন না। এটা বাঙালি শ্রমিকদের অপমান। তারপরই অমিত শাহ বলেন, মনে রাখবেন দিদি এই করোনা এক্সপ্রেসই তৃণমূলকে বাংলার বাইরে পাঠানোর এক্সপ্রেস গাড়ি হবে।
বাংলার সরকারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি বাংলার মানুষদেরও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ১১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তারপরই অমিত শাহের কটাক্ষ, আপনি বলছেন বিজেপি সামলে নিক। বাংলার মানুষ আপনার সেই ইচ্ছা খুব দ্রুত পূর্ণ করতে চলেছে।
Comments are closed.