দেশজুড়ে এনআরসি হবেই, সংসদে ঘোষণা অমিত শাহের, তীব্র বিরোধিতায় মমতা ব্যানার্জি

এনআরসি নিয়ে বিরোধীরা যতই সরব হোক না কেন, অটল অবস্থান কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। বুধবার ফের একবার সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দিলেন, অদূর ভবিষ্যতে দেশজুড়ে এনআরসি হচ্ছেই। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সওয়াল, দেশের বৈধ নাগরিকদের সরকারি তালিকা থাকা বিশেষ প্রয়োজন। তাই দেশজুড়ে নাগরিকপঞ্জি চালু করার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোদী সরকার। অমিত বলেন, সময় এসেছে নতুন ধাঁচের তালিকা তৈরির। এই তালিকায় যাঁরা থাকবেন, শুধু তাঁদেরই ভোটাধিকার থাকবে। দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকারও শুধু তাঁদের থাকবে। এনআরসি চালু করতে ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়েছে। আর বিলম্ব করা যাবে না বলে জানান অমিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আবারও তার বিরোধিতা করেছেন।
নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আগাগোড়াই বিরোধিতা করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বুধবারও এ বিষয়ে মুখ খোলেন তিনি। তৃণমূল নেত্রীর কথায়, এখন কেন এনআরসি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে? এতদিন যাঁরা ভোট দিলেন, তাঁরা কি দেশের নাগরিক নন? এখন কাগজ দেখিয়ে তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে! পাল্টা অমিত শাহ বলেন, একটি দলের সভানেত্রী বা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এনআরসি নিয়ে মমতা কী অবস্থান নেবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বলছি, গোটা দেশেই এনআরসি হবে। বাংলা বা সে রাজ্যের ভোটের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। অমিত শাহের আরও সংযোজন, বিশ্বের কোনও দেশেই অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দেওয়া হয় না। ভারতও দেবে না।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বাংলাকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। অসমের ধাঁচে বাংলায় এনআরসি হবে বলে অনেকদিন ধরে প্রচার চালিয়ে এসেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। অন্যদিকে, কিছুতেই এ রাজ্যে এনআরসি হতে দেবেন না বলে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। অসমে নাগরিকপঞ্জিতে জায়গা না হওয়া ১৯ লক্ষ মানুষের ১২ লক্ষই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা ব্যানার্জিরা। এমনকি অসমের বিজেপি নেতারাও এই এনআরসি প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে কিছুদিন আগেই অমিত শাহ সংসদে জানিয়েছিলেন, গোটা দেশে এনআরসি প্রক্রিয়া শুরু হলে অসমে দ্বিতীয়বার এনআরসি হবে।
এদিকে হিন্দু ভোটারদের আশ্বস্ত করতে বিজেপি এখন নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিল পেশ করতে চাইছে। যা এই অধিবেশনের শেষ দিকে পেশ করা হতে পারে বলে খবর। ওই বিলে প্রতিবেশী দেশগুলির অ-মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় ও নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, ধর্মের ভিত্তিতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ কি আদৌ এই নীতি গ্রহণ করতে পারে? এই বিষয়ে অমিতের জবাব, পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশে সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হয়ে এ দেশের আশ্রয় নিচ্ছেন। তাদের কোনওভাবে অনুপ্রবেশকারী বলা যায় না বলে যুক্তি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।

 

Comments are closed.