আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের (এএমইউএসইউ) অনারারি সম্পাদক মহম্মদ ফাহাদ। ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণের ঘটনায় জখম হন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন স্বাতী সেনগুপ্ত।
প্রশ্নঃ ঠিক কী ঘটেছিল গত ২ রা মে?
মহম্মদ ফাহাদঃ প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি সেই সময়ে ক্যাম্পাসে ছিলেন। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সেমিনারে তাঁর বলার কথা ছিল। তারপর এক অনুষ্ঠানে তাঁকে এএমইউএসইউ-এর আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার কথা ছিল। আর আগে এই আজীবন সদস্যপদ পেয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, বি আর আম্বেদকর, সি ভি রমন, জওহরলাল নেহরুসহ অনেকেই। এই অনুষ্ঠান শুরুর প্রায় ঘন্টাদুয়েক আগে হিন্দু যুব বাহিনী এবং আরএসএসের কিছু সমর্থক গেটের সামনে এসে স্লোগান দিতে, বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। হামিদ আনসারি যেখানে ছিলেন তার থেকে গেটের দূরত্ব ৫০ মিটারও নয়। তখনকার মতো পুলিশ তাদের সরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের গ্রেফতার না করে থানায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। তারা আমাদের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা রক্ষীদের জামা-কাপড় ছিঁড়েও দেয়।
এই খবর পেয়ে আমরা ঠিক করি, থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাবো। তারপর আমরা যখন থানায় যাওয়ার জন্য রওনা দিই, পুলিশ আমাদের রাস্তা আটকায়। আমাদের থানায় যেতে দেবে না বলে আচমকাই লাঠিচার্জ শুরু করে। শুধু তাই নয়, হিন্দু যুব বাহিনীর ৬০ জনের মতো সক্রিয় সদস্য পুলিশের সঙ্গেই আমাদের ওপর আক্রমণ চালায়।
প্রশ্নঃ কতজন ছাত্র-ছাত্রী জখম হয়েছেন?
মহম্মদ ফাহাদঃ মোট ২৫ জন জখম হয়েছে এই আক্রমণের ঘটনায়। আমাকে লাঠি দিয়ে, বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারা হয়েছে। এএমইউএসইউ-এর সভাপতি মাসকুর আহমেদ উসমানিসহ অনেকেই গুরুতর জখম হয়েছেন। আটজন হাসপাতালে ভর্তি। আমাকে চিকিৎসকরা হাসপাতালে থাকতে বলেছিলেন, কিন্তু আমাদের সহপাঠীরা আন্দোলন চালাচ্ছে বলে ওদের সঙ্গে যোগ দিতে আমি চলে এসেছি।
প্রশ্নঃ আপনাদের দাবি কী?
মহম্মদ ফাহাদঃ প্রায় আট হাজার ছাত্র-ছাত্রী আন্দোলন করছেন। সেদিনের ঘটনায় কাউকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। কোনও তদন্ত শুরু হয়নি, আলিগড়ে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করা হোক। পুলিশের লাঠিচার্জের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছি আমরা। বিজেপি সাংসদ সতীশ গৌতম এই ঘটনায় উস্কানি দিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা।
প্রশ্নঃ গত কয়েক বছরে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক বিতর্ক হয়েছে, এর কারণ কী?
মহম্মদ ফাহাদঃ রাজনৈতিক নেতারাই একমাত্র এর উত্তর দিতে পারবেন। বিজেপির ২০১৯ লোকসভা ভোটের প্রচার ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। আর তাদের প্রচারের অন্যতম হাতিয়ারই হচ্ছে মানুষের মধ্যে বিভাজন এবং কারও কারও নামে পাকিস্তানি, দেশদ্রোহী তকমা লাগিয়ে দেওয়া। জেএনইউ, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র একই ঘটনা ঘটছে।
প্রশ্নঃ এটা কি যথেষ্টই দুঃখের বা রাগের কারণ নয় যে, একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে বারবার আক্রান্ত হতে হচ্ছে?
মহম্মদ ফাহাদঃ আমি এভাবে বিষয়টাকে দেখি না। আমি একজন ভারতীয় এবং তার জন্য আমি গর্ববোধ করি। যা যা এখন ঘটছে তা সবই পূর্বপরিকল্পিত। আমরা মনে করি হামিদ আনসারিকে নিশানা করেই সেদিন পুরো গণ্ডগোলটা করে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সেদিন ওই অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়।
প্রশ্নঃ উত্তর প্রদেরশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, জিন্নাহকে নিয়ে এখানে উৎসব করার মতো কিছু হয়নি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আপনারা কী আশা করেন সুবিচার পাবেন?
মহম্মদ ফাহাদঃ মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তার সঙ্গে সেদিনের ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। সেদিন যা ঘটেছে আমরা তার জন্য দোষীদের শাস্তি চাই। ১৯৩৮ সাল থেকে মহম্মদ আলি জিন্নাহর ছবি আছে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর সবচেয়ে বড় কথা, সেদিনের এই ঘটনার সঙ্গে জিন্নাহরও কোনও সম্পর্ক নেই। লোকসভা ভোট আসছে, তাকে মাথায় রেখেই এই সব ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।