করোনাভাইরাস ও তার জেরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড়ো ধাক্কা লেগেছে সংবাদপত্র ব্যবসায়। রবিবারই শেষবার ছেপে বেরিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের ইংরেজি ট্যাবলয়েড মেইল টুডে। এবার জানা গেল, শতাব্দী ছুঁইছুঁই আনন্দবাজার পত্রিকায় মাসের প্রথম দিনের বদলে বেতন হয়েছে অগাস্টের ৪ তারিখ। যা রীতিমতো সংশয় এবং একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সংস্থার কর্মীদের মধ্যে।
ভারতের ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম আনন্দবাজার পত্রিকা। মাসের প্রথম কাজের দিন বেতন হওয়াই যেখানে দস্তুর। কিন্তু করোনা সঙ্কট বদলে দিয়েছে চেনা সব কিছু। একদিকে যেমন শেষ কয়েকমাসে আনন্দবাজার পত্রিকায় চলেছে ব্যাপক ছাঁটাই, তেমনই কর্মীদের একাংশের বেতনেও কোপ পড়েছে। মে মাসের শেষে ইস্তফা দিয়েছেন আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। কর্মী ছাঁটাই নিয়ে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে মতবিরোধের জেরেই এই সিদ্ধান্ত বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন পদত্যাগী সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী। যদিও তা মানতে নারাজ সংস্থারই কর্মীদের একটা বড়ো অংশ। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৭ সালে যখন অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদক, তখন থেকেই আনন্দবাজারে ব্যাপক ছাঁটাই অভিযান শুরু হয়। তাঁর সময়ই এবেলা ট্যাবলয়েড বন্ধ করে বহু কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছিল।
পড়ুন: আনন্দবাজারে কর্মী ছাঁটাইয়ের থেকেও সম্পাদকের ইস্তফা কেন সূর্যকান্ত মিশ্রর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
এ বছর মে মাসের শেষে আনন্দবাজার পত্রিকায় ফের ব্যাপক ছাঁটাই শুরু হয়। দ্য টেলিগ্রাফের দুটি সংস্করণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ছাঁটাই নিয়ে সংস্থার কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংশয় তৈরি হয়েছিল। কিছুদিন আগেই চাকরি যায় আনন্দবাজার পত্রিকায় দু’নম্বর শিউলি বিশ্বাসের। আনন্দবাজারের সার্কুলেশন কমে যাওয়াতেই কি শিউলি বিশ্বাসের চাকরি গেল, জল্পনা চলছে। এরই মধ্যে খবর এল, মাসের প্রথম দিন বেতন হয় যে আনন্দবাজার পত্রিকায়, সেখানে চলতি মাসে বেতন হয়েছে ৪ তারিখ। কর্মীদের একাংশের প্রশ্ন, বেতন পিছোন কীসের ইঙ্গিত?
সাধারণত পয়লা বৈশাখের সময় আনন্দবাজারের কর্মীদের পদোন্নতি এবং বর্ধিত বেতনের চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে এবার কোনও কর্মীর পদোন্নতি হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগেই। বরং বেতন কমেছে অনেকের। একইসঙ্গে চলছে লাগাতার ছাঁটাই।
পড়ুন: কেন ছাঁটাই আনন্দবাজারের দু’নম্বর পদাধিকারী শিউলি বিশ্বাস! সার্কুলেশন কমে যাওয়া?
কোভিড পর্বে সংবাদপত্র ব্যবসায় বিরাট ধাক্কা লেগেছে। বিক্রি কমেছে হু হু করে। সেই জায়গা নিয়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। দেশের প্রায় সমস্ত বড়ো সংবাদপত্রের মতোই আনন্দবাজার পত্রিকারও সার্কুলেশন কমে গিয়েছে অনেক। নির্দিষ্ট দিনের ৩ দিন পর বেতন হওয়ার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক আছে কি, এই প্রশ্নই এখন উঠছে সংস্থার অন্দরে। যে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রতি মাসের প্রথম দিন বেতন হওয়াই দস্তুর, সেখানে এ মাসে ৪ তারিখ বেতন হওয়া কি নিউ নর্মালের অঙ্গ? এর সঙ্গে কি খবরের কাগজ ব্যবসার সামগ্রিক মুনাফা কমে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক আছে? কর্মী ছাঁটাই করে সংস্থার খরচ কমানোর প্রক্রিয়া চলছে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে। প্রায় প্রতিদিনই চাকরি যাচ্ছে সংবাদকর্মীদের। এই পরিস্থিতিতে বেতনের দিন পিছিয়ে যাওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কর্মীরা।
Comments are closed.