এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। ১২০ দিনের মধ্যে তাঁরা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানাতে পারবেন। এদিকে অসমের প্রথম ডিটেনশন সেন্টার তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। অসমের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়ায় ৪৫ কোটি টাকা খরচ করে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম ডিটেনশন সেন্টার। যাঁরা শেষপর্যন্ত নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবেন না, তাঁদের ঠাঁই হবে ডিটেনশন সেন্টারে।
রাজধানী গুয়াহাটি থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়া। সেখানেই বিশাল এলাকাজুড়ে তৈরি হচ্ছে দেশের বৃহত্তম ডিটেনশন সেন্টার। এছাড়াও বরপেটা, ডিমা, হাসও, কামরূপ, করিমগঞ্জ, লখিমপুর, নওগাঁও, নলবাড়ি, শিবসাগর এবং শোনিতপুরেও তৈরি হবে ডিটেনশন সেন্টার। সবমিলিয়ে ১১ টি। গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে মোট ১৫ টি পৃথক চার তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। মোট ৩ হাজার পুরুষ ও মহিলাকে আলাদা আলাদাভাবে বিল্ডিংগুলোতে রাখা হবে। ডিটেনশন ক্যাম্পে হাসপাতাল ও স্কুল তৈরিরও পরিকল্পনা আছে সরকারের।
সূত্রের খবর, প্রতিটি ডিটেনশন সেন্টারে অন্তত ১ হাজার মানুষের থাকার ব্যবস্থা থাকবে। খরচ হবে সবমিলিয়ে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে অসমের ৩১ টি সংশোধনাগারে প্রায় ৯ হাজার বন্দি রয়েছেন। সরকার এই জেলগুলোতে আটক ব্যক্তিদের রাখার পরিকাঠামো বাড়াবে বলেও খবর।
এনআরসিতে নাম না থাকা মানুষরা ১২০ দিনের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানাতে পারবেন। এজন্য অতিরিক্ত ২০০ টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে আরও ২০০ টি ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হবে বলে সূত্রের খবর।
অসমের বিজেপি সরকার অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, যাঁরা এনআরসিতে জায়গা পাননি, তাঁদের বিদেশি তকমা কিংবা গ্রেফতার, কিছুই করা হবে না। আদালতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। কিন্তু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে নিয়ম মাফিক আবেদন জানাতে হবে।
৩১ শে অগাস্ট এনআরসি প্রকাশ হওয়ার পর দেখা যায়, তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। তার মধ্যে সিংহভাগই হিন্দু। এতেই প্রমাদ গোণে অসমের বিজেপি নেতৃত্ব। সরাসরি বিজেপির বিরুদ্ধাচারণ শুরু করে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো। সুর বদলে যায় সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদেরও। অন্যান্য রাজনৈতি দল এবং সংগঠনের পাশাপাশি এনআরসি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেয় রাজ্য বিজেপিও।
মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, অসমে বসবাস করা বেআইনি বিদেশিরা, যাঁরা এদেশের ডিটেনশন সেন্টারে ৩ বছরের বেশি সময় কাটিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের মুক্তি দেওয়া যেতে পারে। শর্ত হিসেবে ১ লক্ষ টাকার বন্ড, শিওরিটি হিসেবে দু’জন ভারতীয় এবং যাচাইযোগ্য ঠিকানা দিতে হবে। পাশাপাশি সেই ব্যক্তির বায়োমেট্রিক তথ্য এবং ছবি সুরক্ষিত ডেটাবেসে রাখতে হবে। প্রতি সপ্তাহে সেই ব্যক্তিকে স্থানীয় থানায় হাজিরা দিতে হবে বলেও জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
Comments are closed.