অসম এনআরসি: তালিকায় নাম তবুও বাড়িতে যাচ্ছে বিদেশি নোটিস, চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ত্রিপুরা সিপিএমের মুখপত্রে
৩১ শে অগাস্ট প্রকাশিত হয়েছে অসম নাগরিকপঞ্জি। বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। আগামী ১৪ ই সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হবে পূর্ণাঙ্গ তালিকা। ভুলে ভরা নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিরোধীদের পাশাপাশি সুর চড়িয়েছে দেশ ও অসমে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে সামনে এল এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদেশি নোটিস দিতে শুরু করেছে অসমের বিজেপি সরকার। আর নোটিস পাচ্ছেন এনআরসি তালিকায় নাম থাকা মানুষরাই। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ত্রিপুরা সিপিএমের মুখপত্র ডেইলি দেশের কথায়।
বৃহস্পতিবার ডেইলি দেশের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়েছে, ‘চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর বাড়ি বাড়ি বিদেশি নোটিস পাঠানো শুরু করেছে সোনওয়াল সরকার। আশ্চর্যের বিষয় হল, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তাদেরকে নয়। বরং যাদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে বেছে বেছে বিদেশি নোটিস ধরানো শুরু হয়েছে। ১৪ ই সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের আগে, কাছাড় জেলার কাটিগড়া রাজস্ব চক্রের অধীন ৫ টি গ্রামের ৭৮ জনকে একদিনে বিদেশি নোটিস ধরায় সীমান্ত পুলিশ’।
ইতিমধ্যেই অসমের গোয়ালপাড়ায় পুরোদমে কাজ চলছে দেশের বৃহত্তম ডিটেনশন সেন্টারের। পরিস্থিতি এমনই যে সেই প্রকল্পে কাজ করছেন যে শ্রমিকরা, তাঁদের অনেকেরই ঠাঁই হতে পারে গোয়ালপাড়ার ডিটেনশন সেন্টারেই।
ওই প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে এমন নোটিস পাওয়া মানুষদের কথা। সেখানে রয়েছে পেশায় দিনমজুর শ্যামেন্দ্র দাসের কথা। তাঁর অনুপস্থিতিতে বাড়িতে এসে নোটিস দিয়ে যায় পুলিশ। তাঁকে সেদিনই থানায় দেখা করতে বলা হয়। এনআরসির খসড়া এবং চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকায় নিশ্চিন্ত হয়েই থানায় গিয়েছিলেন শ্যামেন্দ্র দাস। কিন্তু থানায় গিয়ে জানতে পারেন, ২ রা অক্টোবর কাছাড়ের ট্রাইবুনাল কোর্টে তাঁকে হাজিরা দিতে হবে। কারণ তাঁকে বিদেশি বলে সন্দেহ করছে সোনওয়ালের বিজেপি সরকার।
একই রকমভাবে নোটিস পেয়েছেন রামেন্দ্র বৈষ্ণব, রাজবিহারী বৈষ্ণব, আব্দুল কায়ুম বড়ভুঁইয়া, আনোয়ারা বেগম বড়ভুঁইয়া, ফরিজুদ্দিন মজুমদার, পদ্মলাল রায়রা। তাঁদের প্রত্যেককেই সরকার বিদেশি বলে সন্দেহ করছে। এই প্রসঙ্গেই মনে রাখা ভাল, অসমের ডাকসাইটে মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা কদিন আগেই বলেছিলেন, তাঁরা এই তালিকায় সন্তুষ্ট নন। কারণ তালিকায় প্রচুর বিদেশির নাম ঢুকে আছে। তাই ১৯৫১ সালকে ভিত্তি বছর হিসেবে ধরে নতুন করে এনআরসি করা হবে বলেও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন অসমের অর্থমন্ত্রী। এই প্রেক্ষিতেই সামনে আসে, চন্দ্রযান ২ এর অন্যতম সদস্য বিজ্ঞানী জিতেন্দ্রনাথ গোস্বামীর নামও বাদ গিয়েছে এনআরসি তালিকা থেকে। ফলে তাঁকেও ফরেনার ট্রাইবুনালে আপিল করতে হবে।
ডেইলি দেশের কথা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে বিজেপির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে ২০১৭ সালে গুয়াহাটি হাইকোর্টের একটি রায়। যে রায়ে বলা হয়েছিল, কেউ যদি আদালত বা ট্রাইবুনালে বিদেশি ঘোষিত হন, তাহলে তাঁর সন্তান এবং ভাই-বোনকেও বিদেশি হিসেবেই অভিহিত করা হবে। এখন যাঁরা এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁদের ট্রাইবুনালে আপিল করে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ট্রাইবুনালের বিচারে যদি তিনি বিদেশি হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে যান, তাহলে তাঁর পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের নাম এনআরসি তালিকায় থাকলেও, তাঁরা সবাই অবৈধ বিদেশি হয়ে যাবেন। সবারই নাম বাদ যাবে এনআরসি থেকে। ফলে যাঁদের পরিবারের একজনের নাম এনআরসিতে নেই, তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে গোটা পরিবারকেই অবৈধ বিদেশি হয়ে পড়তে হবে কিনা তা নিয়ে এখন প্রবল উৎকণ্ঠার প্রহর গুণছে অসম। তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে এনআরসিতে নাম থাকা ব্যক্তিদেরও স্রেফ সন্দেহের বশে নোটিস পাঠানোর ঘটনাক্রম। এই জোড়া প্রক্রিয়ায় এনআরসি ছুটের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
Comments are closed.