আজ অযোধ্যা মামলার রায়, থমথমে অযোধ্যা, সতর্ক প্রশাসন

আজ শনিবার অযোধ্যা মামলার রায়। রায় কী হবে, তা নিয়ে এখন সারা দেশেই কৌতূহল তুঙ্গে। একই সঙ্গে উত্তেজনায় ফুটছে গোটা উত্তরপ্রদেশ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সব রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে, যাতে রায়কে কেন্দ্র করে কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহকর্মীদের বলে দিয়েছেন, রায় নিয়ে কেউ যেন কোনও আলটপকা মন্তব্য না করেন। তাঁর নির্দেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যেই পদস্থ অফিসারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, অযোধ্যা মামলার রায় নিয়ে কেউ যেন মুখ না খোলেন। প্রতিক্রিয়া যা দেওয়ার তিনিই দেবেন। মুখ্যমন্ত্রীও জেলা প্রশাসনগুলিকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে এখন থেকেই করা পুলিশ প্রহরা ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে, মিশ্র এলাকাগুলির দিকেও বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। দিন কয়েকের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা। অযোধ্যা মামলার রায়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে তা ঘোষণা হওয়ার আগেই তিনি কলকাতায় ফিরতে চান। নবান্ন সূত্রে খবর, সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রায় বেরনোর আগে একটি বৈঠক করতে পারেন। তাঁর পরিষ্কার বক্তব্য, মামলার রায় যাই হোক না কেন, তাকে কেন্দ্র করে কোনওরকম বিশৃঙ্খলাকে বরদাস্ত করা হবে না। সামান্য গোলমাল হলেও তা কড়া হাতে মোকাবিলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।
এদিকে অযোধ্যায় কিছুদিন ধরেই রীতিমতো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। শহর একেবারে থমথমে হয়ে রয়েছে। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি, আধাসেনাও বিভিন্ন এলাকায় টহলদারি শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। তাঁরও নির্দেশ, রায়কে ঘিরে যে কোনও অপরাধমূলক কার্যকলাপকে কড়া হাতে মোকাবিলা করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা ও সংগঠনকে সংযত থাকার জন্য বিশেষ আবেদন জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ শুক্রবার তাঁর চেম্বারে উত্তরপ্রদেশের  মুখ্যসচিব রাজেন্দ্রকুমার তিওয়ারি ও রাজ্য পুলিশের ডিজি ওমপ্রকাশ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব ও ডিজির কাছে তিনি জানতে চান, রাজ্য সরকার অযোধ্যা মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই দুই আমলা প্রধান বিচারপতিকে ওই সব ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে আশ্বস্থ করেছেন। অযোধ্যা জেলা প্রশাসন, আপাতত কয়েক দিনের জন্য পুলিশের সমস্ত ছুটি বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। অযোধ্যার বিতর্কিত স্থানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অযোধ্যায় কোনও ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মিছিল করা যাবে না বলে প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে।
হিন্দু-মুসলিম, দুই পক্ষের দীর্ঘদিনের বিবাদ অযোধ্যার ২.৭৭ একর জমি নিয়ে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়ায় অযোধ্যা বিবাদ। অযোধ্যা মামলায় তিন বিচারপতির লখনউ বেঞ্চ ২০১০ সালে ৩ অগাস্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর মধ্যস্থতার পথে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সে প্রক্রিয়া সফল হয়নি। চলতি বছরের মার্চে অযোধ্যা জমি মামলার মধ্যস্থতার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ইব্রাহিম কলিফুল্লার নেতৃত্বে আর্ট অফ লিভিং-খ্যাত শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর, সিনিয়র আইনজীবী এবং মধ্যস্থতাকারী শ্রীরাম পঞ্চু, এই তিনজনের প্যানেল তৈরি করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু তারপরও মামলাকারীদের ঐকমত্যে আনা যায়নি। এরপরই মামলার দায়িত্ব নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, নিয়মিত শুনানি চলবে।  সেইমতো সর্বোচ্চ আদালতে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত দৈনিক শুনানি চলে। তবে প্রধান বিচারপতি রায়দান স্থগিত রাখেন।

Comments are closed.