বিচারক সুরেন্দ্র যাদব, বাবরি মামলার জন্য রঞ্জন গগৈকে আবেদন করে অবসর পিছিয়েছেন এক বছর! ‘ঘুমের মধ্যে সাক্ষ্য শুনি’, বলছেন বিচারক
তিন দশক পুরনো বাবরি ধ্বংস মামলার রায়দান করে এখন দেশবাসীর আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে তাঁর নাম। স্পেশাল সিবিআই বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব। যিনি বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় ৩২ জন মূল অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন৷ এর আগেও অবশ্য একাধিক নজির গড়েছেন বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব এবং সবই বাবরি ধ্বংস মামলা নিয়েই। জানেন সেগুলো?
বিচারক যাদবের কর্মজীবনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর৷ কিন্তু বাবরি ধ্বংস মামলার শুনানি অসম্পূর্ণ রেখে অবসর নিতে চাননি তিনি৷ তাই চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে। চিঠিতে লিখেছিলেন, নতুন বিচারকের হাতে বাবরি ধ্বংস মামলার দায়িত্ব বর্তালে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে শুনানি পর্ব। তাতে অনেক সময় নষ্ট হবে৷ তাই তাঁর কর্মজীবনের মেয়াদ বাড়ানো হোক। তিনি আরও লেখেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যেহেতু টানা চার বছর ধরে এই মামলার শুনানি করছেন, এই অবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় তিনি নিজেই দিয়ে যেতে চান। সাম্প্রতিক সময়ে কোনও বিচারপতির এমন আবেদনের নজির নেই। আবার বিচারকের এমন আবেদন মেনে নেওয়ারও নজির সম্ভবত নেই। হ্যাঁ, বিচারক সুরেন্দ্রকুমারের আবেদন মেনে নিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। না হলে হয়ত অন্য কোনও বিচারক এদিন বাবরি ধ্বংস মামলার রায় পড়ে শোনাতেন। কিংবা আরও পিছিয়ে যেত রায়দান।
বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদবের জীবন
বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদবের জন্ম উত্তর প্রদেশের জৌনপুর জেলার পাখানপুর গ্রামে। ৩১ বছর বয়সে স্টেট জুডিশিয়াল সার্ভিসে সফল হয়ে পেশায় প্রবেশ করেন ফৈজাবাদের (বর্তমানে অযোধ্যা) অতিরিক্ত মুন্সেফ হিসেবে। ক্রমে লখনউয়ের জেলা বিচারক হন। বাবরি ধ্বংস মামলায় বিশেষ আদালতের বিচারকের দায়িত্ব না পেলে অবশ্য গত বছর লখনউ জেলা বিচারক হিসেবেই কর্মজীবনে ইতি হোত। কিন্তু বিচারক সুরেন্দ্রনাথ যাদব নিজেই চেয়েছিলেন তিন দশক পুরনো মামলার রায় দিয়ে যেতে। এই ভাবে তিনি জেলা বিচারক হিসেবে অবসর নিলেও বিশেষ বিচারক হিসেবে থেকে গিয়েছিলেন, এটাও ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় এক নজির।
বাবরি মামলার রায় নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক, কী বলছেন বিচারক যাদব?
দীর্ঘ ৫ বছর ৩৬ দিন বাবরি ধ্বংস মামলা সামলেছেন বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব। বুধবার রায় দিয়ে অবসর নেওয়ার পর তিনি জানান, মামলাটি ছিল অত্যন্ত জটিল এবং সংবেদনশীলও বটে। একদিকে প্রচুর তথ্যপ্রমাণ, অসংখ্য সাক্ষীসাবুদ, তার উপর রয়েছে রাজনৈতিক রং। বাদী-বিবাদী, দু’পক্ষই দারুণ খেটেছে। কিন্তু বিচারককে রায় দিতে হয় তাঁর কাছে দাখিল হওয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে, বলেন বিচারক যাদব। মামলার রায় নিয়ে যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এ নিয়ে কী প্রতিক্রিয়া তাঁর? তিনি জানাচ্ছেন, খবরের কাগজে কী লিখল বা লোকে কী ভাবল, তার উপর ভিত্তি করে নয়, আইনের চোখে যা বস্তুনিষ্ঠ, সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে এই রায়ে। বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদবের কথায়, ‘আমি বারবার খুঁটিয়ে দেখেছি এই মামলার তথ্যপ্রমাণ, এমনকী রায়দানের আগের মুহূর্ত পর্যন্তও। ৩৫১ জন সাক্ষীর বিবৃতি বারবার পড়েছি। রায় লিখেছি একমাস ধরে।’ স্পেশাল জাজ সুরেন্দ্রকুমার যাদব আরও বলেন, ‘ঘুমের মধ্যেও বাবরি ধ্বংস মামলার সাক্ষ্য শুনতে পেতাম আমি!’
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা চলছে, মুন্সেফ সুরেন্দ্র যাদব সেদিন ছিলেন ওই অযোধ্যাতেই। সেদিন নিজেও জানতেন না যে, একদিন মুন্সেফ থেকে বিচারক হয়ে তিনিই এই বাবরি ধ্বংস মামলার রায় দেবেন!
Comments are closed.