করোনার কোপে বিধ্বস্ত সারা বিশ্ব। বিজ্ঞানী ও গবেষকরা প্রাণপণ খুঁজছেন এই অতিমারি থেকে মুক্তির পথ। সেই মহাযজ্ঞে নিভৃতে অবদান রেখে চলেছেন এক বাঙালি বাবা ও মেয়ে, অধ্যাপক সমীর সাহা ও মেয়ে সেঁজুতি সাহা। বাংলাদেশ থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের জিনরহস্য উন্মোচন করলেন এই দুই অণুজীববিজ্ঞানী।
এর আগে শিশুদের নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, মেনিনজাইটিস, ডেঙ্গু সহ নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশি মাইক্রোবায়োলজিস্ট সমীর সাহা। পেয়েছেন দেশ-বিদেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ সম্মান। এবার মেয়ে সেঁজুতিকে নিয়ে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের সঙ্গে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উদঘাটন করলেন সমীর সাহা।
সিএইচআরএফ প্রতিষ্ঠানের কার্যনির্বাহী পরিচালক সমীরবাবু এবং মেয়ে সেঁজুতি ঢাকা শিশু হাসপাতালে চাইল্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক। সম্প্রতি তাঁদের এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার সাফল্যের কথা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন তাঁরা।
এই জিন উদ্ঘাটন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স জানা গেলে রোগের গতিবিধি সম্পর্কে জানা যাবে। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সাহায্যে ভাইরাসের জেনেটিক পরিবর্তন জানা সম্ভব হয়। ফলে প্রতিষেধক তৈরির কাজও সহজ হয়ে যাবে।
আরও সহজ করে বললে, তথ্যপ্রযুক্তিতে বিভিন্ন কোডিং ব্যবহার করে সফটওয়্যার বানানো হয়। সেই কোড যেরকম হবে সফটওয়্যারটিও সেভাবে কাজ করবে। তেমনই প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যে জিনও এই সফটওয়্যারের মতো কাজ করে। জিন যেমন হবে, প্রাণীর আচরণ তেমন হবে। আর করোনাভাইরাসও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই এর আচরণ ইত্যাদি জানতে হলে এর জেনেটিক কোড জানা প্রয়োজন। জেনেটিক কোড জানা গেলে তার উৎপত্তি, বিস্তারের তীব্রতা, প্রতিষেধক, চিকিৎসাসহ নানা দিক খতিয়ে দেখা সহজ হয়।
তারই গবেষণায় নামেন বাঙালি মাইক্রোবায়োলজিস্ট পিতা ও কন্যা। সাফল্যও এসেছে। বাংলাদেশের চাইল্ড হেল্থ রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ (সিএইচআরএফ)-এর ৮ সদস্যের যে গবেষক দল জিনোম সিকোয়েন্স ম্যাপিংয়ের কাজ করেছে তার নেতৃত্বে রয়েছেন বাবা-মা।
কিন্তু মুশকিল হল, এই করোভাইরাস দ্রুত নতুন নতুনভাবে আবির্ভূত হচ্ছে। যেহেতু এর সংক্রমণ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, তাই এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে এবং এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে গেলে এর গঠন বদল হচ্ছে। আর এর ফলে এক অঞ্চলে করোনার টিকা বা প্রতিষেধক, বা যে কোনও ধরনের ওষুধ অন্য অঞ্চল কাজ না-ও করতে পারে।
তবে সরকারি সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের এই চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন তাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা চালাচ্ছেন তা কুর্নিশযোগ্য। কুর্নিশ বাবা ও মেয়ে, মাইক্রোবায়োলজিস্ট সমীর সাহা ও সেঁজুতি সাহাকেও।
চলতি বছরের গোড়ায় সমীর ও সেঁজুতির কথা নিজের ব্লগ ‘গেটসনোট’-এ উল্লেখ করেছিলেন মাইক্রোসফট কর্ণধার বিল গেটস। তিনি লিখেছিলেন, কীভাবে ছোট্ট সেঁজুতি খাবার টেবিলে বসে বাবার কাছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার গল্প শুনত। কীভাবে তিনিও বাবার মতো মাইক্রোবায়েলজিস্ট হয়ে উঠলেন। বিল গেটস এও লিখেছিলেন, আমারও ইচ্ছে হয়, যদি ওঁদের সঙ্গে একই খাবার টেবিলে বসতে। নানা অসুখ নিয়ে কত কী শিখতে পারতাম! এই বেসরকারি সংস্থাকে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন অনেকটা সহায়তাও করেছে।
Comments are closed.