সোমবার বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন (সংশোধনী), ২০২০ বিল পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
এই সংশোধনীর ফলে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের সমবায় ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে সরাসরি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার হাতে। সমবায় ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় এবং নিয়ন্ত্রিত বিধি-নিয়মের মধ্যে আনার জন্য এই সংশোধন প্রয়োজন বলে দাবি কেন্দ্রের।
এতদিন ধরে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি পরিচালিত হয়ে আসছে রাজ্য সরকারের সমবায় আইনের মাধ্যমে। তার বিধিনিয়ম থেকে নিয়ন্ত্রণ, ছিল রাজ্য সরকারের হাতেই। তা এবার সরাসরি আরবিআই এর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্যই বিল পেশ মোদী সরকারের।
সংশোধনীর ফলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কোনও ব্যাঙ্ক সংমিশ্রণের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ককে মোরাটোরিয়ামে না পাঠিয়েই তা করতে পারবে। আগে ব্যাঙ্ককে মোরাটোরিয়াম দেওয়া হলে আমানতকারীরা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকাই কেবল তুলতে পারেন এবং ব্যাঙ্কেরও ধার করার সুযোগ কমে আসে। সেক্ষেত্রে দৈনন্দিন কাজ চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে। চাপ সরাসরি গিয়ে পড়ে আমানতকারী এবং ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের উপর। ঠিক যা হয়েছিল পিএমসি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে।
আপনার কি সুবিধে?
পিএমসি ব্যাঙ্কের বহু আমানতকারী। তার মধ্যে একটা বিরাট অংশ পেনশনভোগী। সমস্যা শুরু হতেই উদ্বিগ্ন বয়স্ক মানুষের লাইন পড়ে যায় ব্যাঙ্কের শাখার সামনে। কিন্তু টাকা তোলার অঙ্ক নির্দিষ্ট থাকায় বিপত্তি আরও বাড়ে। প্যানিক ছড়ায় চারদিকে। প্রবল অনিশ্চয়তায় রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার আমানতকারী।
পিএমসি ব্যাঙ্ক সরাসরি আরবিআইয়ের নিয়ন্ত্রণাধীণ না হওয়ায় প্রাথমিকভাবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপে সমস্যা হয়েছিল। পরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দায়িত্ব নেয়। সরকারের দাবি, অন্যান্য সমবায় ব্যাঙ্ক যারা আন্তঃরাজ্য লেনদেনে যুক্ত তেমন ব্যাঙ্ককে আরবিআইয়ের ছাতার তলায় আনলে আমানতকারীদের অনিশ্চয়তার বিষয়টি আরও ভালোভাবে সামাল দেওয়া যাবে। ঋণখেলাপী বা ব্যাঙ্ক জালিয়াতির সমস্যার ক্ষেত্রেও দ্রুত পদক্ষেপ সম্ভব হবে।
সোমবার বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন কেন্দ্রের তরফে বিল পেশ করে এমনই যুক্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও বিরোধীরা তা মানতে নারাজ।
কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী ও সাংসদ শশী থারুর। তাঁদের দাবি, সংশোধনী কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কোঅপারেটিভ ফেডারেলিজমের সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, কেন সংসদের বাজেট অধিবেশনের সময় এই সংশোধনী বিল পেশ হলেও পরের অধিবেশনে তোলা হয়নি। এর উত্তরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানান, আরবিআই আবার নতুন কিছু নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করতে চাওয়ায় আগে বিলটি মুলতুবি করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক পিএমসি ব্যাঙ্ক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানান, ভবিষ্যতে আমানতকারী বা গ্রাহকদের এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে নয়া সংশোধনী। নির্মলা সীতারমন এও জানান, এই সংশোধনী কোনওভাবেই প্রাইমারি এগ্রিকালচার ক্রেডিট সোসাইটি বা সমবায় সমিতি যারা ব্যাঙ্ক বা ব্যাঙ্কিং শব্দগুলি ব্যবহার করে না, তাদের উপর কার্যকরী হবে না। তাছাড়া কৃষি উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানকারী সমিতির ক্ষেত্রেও এই অর্ডিন্যান্স কার্যকর হবে না।
ভারতে সমবায় ব্যাঙ্কের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার এবং এই ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রায় ৮ কোটি ৬০ লক্ষ আমানতকারী।
Comments are closed.