কপিল সিব্বলের চ্যানেল তিরঙ্গা টিভির ২০০ কর্মী বিনা নোটিসে ছাঁটাই, কংগ্রেস নেতাকে বিজয় মালিয়ার সঙ্গে তুলনা সাংবাদিক বরখা দত্তের
কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কপিল সিব্বলের মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল তিরঙ্গা টিভি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। সোমবার বেলা ১২ টা নাগাদ এই বিষয়ে একের পর এক ট্যুইট করে বিতর্কে নয়া মাত্রা যোগ করলেন সাংবাদিক বরখা দত্ত। সরাসরি কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল ও তাঁর স্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বরখা অভিযোগ করেন, তিরঙ্গা টিভির অন্তত ২০০ জন সংবাদকর্মীকে মুহূর্তের নোটিসে কর্মহীন করা হয়েছে। এমনকী তাঁদের ৬ মাসের বেতন অবধি দেওয়া হয়নি। ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের হয়ে কথা বলায় তাঁকে কপিল সিব্বলের হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে অভিযোগ বরখা দত্তের।
বরখা দত্ত তাঁর একটি ট্যুইটে লিখেছেন, কপিল সিব্বল ও তাঁর স্ত্রীর চ্যানেল তিরঙ্গা টিভির পরিস্থিতি ভয়াবহ। ২০০ র বেশি কর্মচারীকে ৬ মাসের বেতন না দিয়েই কাজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি সমাজে নিজেকে ভালো দেখানোর চেষ্টায় মগ্ন থাকেন, তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে অত্যন্ত আপত্তিকর ব্যবহার করেছেন।
সংবাদসংস্থা আইএএনএস সূত্রে খবর, বরখার ট্যুইট-বৃষ্টির পরই কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি স্থির করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং ২০০ কর্মীর বকেয়া মেটানোর জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে ট্যুইটারে কপিল সিব্বলের সঙ্গে বিজয় মালিয়ার তুলনাও টেনেছেন সিনিয়র সাংবাদিক। একটি ট্যুইটে তিনি লিখেছেন, আমি জানতে পেরেছি কপিল সিব্বল এবং তাঁর স্ত্রী মোদীর বাহানা দিয়ে কর্মীদের চাকরি থেকে বের করে দিচ্ছিলেন। তাঁরা বলে বেরাচ্ছিলেন, মোদী চ্যানেল চালাতে দিচ্ছেন না। কিন্তু একথা সরাসরি মিথ্যে। ভারত সরকার কিছুই করেনি। আর পতি-পত্নী কর্মীদের সঙ্গে একটিবারও দেখা না করে লন্ডন চলে গেলেন ছুটি কাটাতে। যে কারণে আমি তাঁকে বিজয় মালিয়া বলে ডাকতে বাধ্য হচ্ছি।
সমস্যার সূত্রপাত লোকসভা ভোট মেটার পর। ২৩ শে জুন ফল বেরনোর পর থেকেই বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয় এই ইংরেজি নিউজ চ্যানেলে। সূত্রের খবর, নরেন্দ্র মোদীর বিপুল জয়ের পর থেকেই অর্থলগ্নিকারীরা পিছু হঠতে থাকেন। চ্যানেলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে দেনা। এই সময় সংস্থার বেশ কয়েকজন কর্মীকে ছাঁটাইও করে কর্তৃপক্ষ। এমনকী কর্মীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলার জন্য তাঁকে কপিল সিব্বলের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল বলেও ট্যুইটে অভিযোগ করেন বরখা দত্ত।
এর আগে তিরঙ্গা টিভির কর্মীরা দিল্লি প্রেস ক্লাবের সামনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সাংবাদিকরা বিক্ষোভ দেখান চ্যানেলের মালিক কপিল সিব্বলের বাড়ির সামনেও। তাঁদের অভিযোগ, কোনও নোটিস না দিয়েই তাঁদের ছাঁটাই করা হয়েছে। মেটানো হয়নি বকেয়া প্রাপ্যও।
লোকসভা ভোটের আগে তিরঙ্গা টিভি নামে একটি ইংরেজি নিউজ চ্যানেল সম্প্রচার শুরু করে। চ্যানেলের মালিক কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের স্ত্রী। প্রাথমিকভাবে চ্যানেলটিকে অন্তত ২ বছর চালানোর নীল নকশা তৈরি হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। অন্যান্যদের সঙ্গেই তাতে যোগ দেন বরখা দত্তও। কিন্তু ভোট মিটতেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে কংগ্রেস নেতার স্ত্রীয়ের চ্যানেল। ভোটের সময় থেকেই চ্যানেলের বিভিন্ন কাজকর্মে অনিয়ম নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছিলেন কর্মীরা। রাজধানীর সংবাদমাধ্যমের একাংশ অবশ্য বরখা দত্তের মুখ খোলার আরেকটি ব্যাখ্যা সামনে আনছেন। তাঁরা বলছেন, এমাসের শুরুতে বরখা দত্তের চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। তারপরই মুখ খুলেছেন সিনিয়র সাংবাদিক। যদিও এ বিষয়ে কপিল সিব্বল কিংবা তাঁর স্ত্রীয়ের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে তিরঙ্গা টিভি প্রায় সমস্ত প্ল্যাটফর্ম থেকেই উধাও হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র কয়েকটি ডিটিএইচে পরিষেবা পাওয়া গেলেও, চ্যানেলের তরফে প্রি-রেকর্ডেড অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে।
Comments are closed.