দীনদয়ালে নাজেহাল বিজেপি। এক বছর সবে পেরিয়েছে, ১১ নম্বর অশোক রোডের পুরনো আস্তানা ছেড়ে দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের হাই টেক সদর দফতরে গিয়ে উঠেছেন অমিত শাহরা। কিন্তু তারপর থেকে দলের পারফর্মেন্সের গ্রাফ পড়তির দিকে।
দিনটা ছিল ১৮ ই ফেব্রুয়ারি। ডেপুটি অমিত শাহকে পাশে নিয়ে নতুন পার্টি অফিস উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ১ লক্ষ ৭০ হাজার স্কোয়ার ফুটের প্রাসাদোপম দলীয় দফতরটি সেদিন সাজানো হয়েছিল নানা রঙের আলোর মালায়। ঢাক-ঢোলের বাজনার তালে তালে নেচে উঠেছিল বিজেপির প্রবীন থেকে নবীন প্রজন্ম। দিনটা বিজেপির কাছে আরও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, ঘটনাচক্রে সেদিনই ত্রিপুরায় পালাবদলের পক্ষে মানুষের রায় ইভিএম বন্দি হয়। পরে দেখা যায় দীর্ঘ বাম শাসনের অবসানের পক্ষেই ঢেলে ভোট দিয়েছেন মানুষ। বিজেপির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ১৮ ই ফেব্রুয়ারির কথা। কিন্তু সে সুখ বেশিদিন সইল না।
একে একে কর্ণাটকে বিধানসভা নির্বাচন। সবচেয়ে বড় দল হয়েও সরকার গড়তে ব্যর্থ গেরুয়া শিবির। মধ্যপ্রদেশেও একই হাল। এদিকে রাজস্থান ও ছত্তিসগঢ়ে বিজেপিকে হারিয়ে সরাসরি সরকার তৈরি করে ফেলে কংগ্রেস। এমনই এক সময় খবর আসে, বিজেপির প্রাণপুরুষ অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রয়াত হয়েছেন। সদ্য রঙ করা প্রাসাদোপম সদর দফতর থেকেই বেরোয় অটলজির শেষ যাত্রা।
নাড়াচাড়া পড়ে যায় দলের অভ্যন্তরে। হচ্ছে টা কী? হাজারো রাজনৈতিক বিশ্লেষণ থেকেও যখন এমন অধোগতির কারণ বোধগম্য হচ্ছে না তখন নতুন যে বাড়িতে আসা হল, তাতেই লুকিয়ে নেই তো অমঙ্গলের বীজ? প্রশ্ন ওঠে গেরুয়া পার্টির ভিতরে। সভাপতি অমিত শাহ জানতে পারেন, দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে নবনির্মিত পার্টি অফিস আসলে বাস্তুদোষে দুষ্ট। তারপর বিভিন্নভাবে দোষ কাটানোর চেষ্টা হয়েছে কিন্তু ফল দেয়নি কিছুই। অগত্যা গৃহত্যাগ! বিজেপির অভ্যন্তরের খবর, তারপর থেকে বিজেপি সভাপতিকে ১১ নম্বর অশোক রোডেই বেশি দেখা গিয়েছে। এমনকী নিজের অফিসও তিনি পুরনো জায়গাতেই ফিরিয়ে এনেছেন। আসন্ন লোকসভা ভোটের ওয়ার রুমও হবে অশোক রোডের পুরনো আস্তানাতেই।
এভাবেই, অশোক রোডেও সদর দরজায় বাস্তুতে ত্রুটি ঠিক ধরা পড়ে গিয়েছিল সভাপতির চোখে। সেজন্য নতুন দরজা অবধি বসাতে হয়েছিল অশোক রোডের বিজেপি সদর দফতরে! সেই বাস্তুদোষমুক্ত দরজা দিয়ে আজও যাওয়া-আসা করেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
বাস্তুর আবার কংগ্রেস-বিজেপি!
প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় রাজীব গান্ধী ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদ রোডে কংগ্রেসের জন্য একটি সুবিশাল পার্টি অফিস তৈরি করিয়েছিলেন। নাম রাখা হয়েছিল জওহর ভবন। কিন্তু নতুন অফিসের গৃহপ্রবেশের ঠিক আগে রাজীব গান্ধীকে হত্যা করা হয়। দোষ পড়ে বাস্তুর। এই ঘটনার পরই কংগ্রেস বাড়ি বদলের সিদ্ধান্ত বদলায়, থেকে যায় পুরনো ঠিকানা ২৪ আকবর রোডেই। রাজেন্দ্রপ্রসাদ রোডের বাড়িতে এখন রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনের অফিস।
বাংলোর শুভ-অশুভ
রাজধানীর মৌলানা আজাদ রোডস্থিত সরকারি বাংলো কেউ নিতে চায় না। কারণ ওই বাংলোয় যে মন্ত্রী থাকতে শুরু করেন, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর মন্ত্রীত্ব যায়। আবার ১৩ নম্বর তালকাটোরা রোডের বাংলোর পিছনে ছোটে গোটা দুনিয়া। একদা এই বাড়িতে থাকতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। দেশের হেন কোনও উচ্চপদ নেই, প্রণববাবু যার দায়িত্ব পালন করেননি। সর্বশেষ ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে। সে বাংলো পেতে লম্বা লাইন পড়ে বলে ল্যুটিয়েন্সে প্রচলিত রসিকতা। প্রণববাবুর ছেড়ে যাওয়া ১৩ নম্বর তালকাটোরা রোডের বাংলোয় এরপর এসে ওঠেন অশোক গেহলত। আর এসেই হাতে গরম রেজাল্ট। কংগ্রেসের সংগঠনের দায়িত্ব পান অশোক। সেই রেশ ফুরোতে না ফুরোতেই একেবারে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী।
Comments are closed.