কাশ্মীর পরিস্থিতি: আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবর অতিরঞ্জিত, জানাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, অবস্থানে অনড় বিবিসি

গত ৫ ই অগাস্ট কাশ্মীরের ওপর থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে ৩৭০ ধারা। তারপর থেকেই কাশ্মীরের কী অবস্থা, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী নানা ছবি উঠে আসছে একাধিক সংবাদমাধ্যমে। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম সম্প্রচার করেছে কাশ্মীরের স্বাভাবিক ছবি। আবার কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুটছেন, বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশ এবং আধা সেনা গুলি এবং ছররা গুলি চালাচ্ছে। এবার কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়াল বিবিসি সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
কাশ্মীর নিয়ে বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স সহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনকে অসত্য বলে কয়েকদিন ধরেই দাবি করছে মোদী সরকার। এবার তাদের খবরের সত্যতা দাবি করে ভারত সরকারের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করল বিবিসি।
গত ৫ ই অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে ‘স্পেশাল স্টেটাস’ প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং একই সঙ্গে রাজ্যের মর্যাদা সরিয়ে জম্মু-কাশ্মীরকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভাজনের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্নিগর্ভ হতে পারে উপত্যকা, এই আশঙ্কা কেন্দ্রের ছিলই। বিক্ষোভ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সৈন্য মোতায়েন এবং অন্যান্য ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষিতেই এবার বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং ছবি নিয়ে আপত্তি জানালো ভারত।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১০ ই অগাস্ট, শনিবার। সেদিন বিবিসি একটি ফুটেজ দেখিয়ে দাবি করে, শুক্রবার নামাজের পর শ্রীনগরের সওরা এলাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষের বিক্ষোভ হয়। যা মোকাবিলা করতে নিরাপত্তা বাহিনী ছররা এবং গুলি চালিয়েছে বলেও দাবি করা হয় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের তরফে। একই কথা জানায় রয়টার্সও। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ এবং জার্মান, দুই সংবাদসংস্থার রিপোর্টকেই অসত্য বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র বসুধা গুপ্তা দুপুর ১২ টা নাগাদ ট্যুইট করেন সরকারি বক্তব্য। তিনি জানান শ্রীনগর, বারামুলায় কয়েকটি বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু কোনও বিক্ষোভেই ২০ জনের বেশি ছিলেন না। তবে তিনি ট্যুইটে বিবিসির নাম নেননি। রয়টার্স এবং পাকিস্তানের ইংরেজি সংবাদপত্র ডনের নাম নিয়েছিলেন।

দু’ঘণ্টার মধ্যে নিজেদের প্রতিবেদন এবং ছবির স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে বিবিসির দক্ষিণ এশিয়ার ব্যুরো চিফ নিকোলা কারিম ট্যুইট করেন। তাঁর দাবি, সওরায় বিক্ষোভের প্রতিবেদনকে রং চড়ানো বলে ভারত সরকার দাবি করলেও, সত্যি জানতে এই দেখুন বিবিসির এক্সক্লুসিভ ফুটেজ।

তার ঠিক পরেই ফের ট্যুইট করে নিকোলা দাবি করেন, ভিডিওটি শ্রীনগরের সওরায় শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩ টেয় তোলা হয়েছে। রবিবার বিবিসির তরফে একটি লিখিত বিবৃতিও পেশ করা হয়। তার বয়ান, ‘বিবিসি তার সাংবাদিকদের পাশে রয়েছে। কাশ্মীরে ঘটে চলা ঘটনা ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, এই দাবিকে আমরা কঠোরভাবে খণ্ডন করি। আমরা গোটা ঘটনাকে নিরপেক্ষভাবে এবং যথাযতভাবে আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের মতো আমরাও কাশ্মীরে কাজ করতে গিয়ে প্রচণ্ড বিধিনিষেধের মধ্যে পড়ছি, কিন্তু আমরা ওখানে যা হচ্ছে, তা রিপোর্ট করতে বধ্যপরিকর’।

যদিও ভারত সরকার কাশ্মীর নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের সঙ্গে একমত নয়। সরকারের অভিযোগ, আপাত শান্ত কাশ্মীরে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভের ঘটনা তুলে ধরে জনমানসে ভুল প্রতিক্রিয়া তৈরির চেষ্টা করছে প্রথম বিশ্বের মিডিয়া। দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাতেও উপত্যকায় স্বাভাবিক জনজীবন ফেরার ইঙ্গিত স্পষ্ট। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে উল্টো সুর বিবিসি, রয়টার্স কিংবা নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।

প্রসঙ্গত মনে করা যেতে পারে, এবছরের শুরুতেই পাকিস্তানের পাশতুন তাহাফুজ আন্দোলনের (পিটিএম) সময়, পাকিস্তানে বিবিসিকে ‘ভারত ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন’ নামে কটাক্ষ করা শুরু হয়েছিল। সেই সময় পাক সরকারেরও অভিযোগ ছিল, ছোট আন্দোলনকে বড় করে দেখিয়ে আসলে ভারতের পক্ষ নিচ্ছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি। এবার সীমান্তের এপার থেকে উঠলো একই আওয়াজ, শুধু বদলে গিয়েছে দেশের নাম।

Comments are closed.