কলকাতায় বিফ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে প্রাণনাশের হুমকির মুখে উদ্যোক্তারা, পুলিশে অভিযোগ জানানোর প্রস্তুতি
এবার খাওয়ার আসরেও কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের ফতোয়া। আগামী ২৩ শে জুন, শহরে কলকাতা বিফ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করতে চলেছে দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল নোট। কিন্তু এই অনুষ্ঠান নিয়েই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, নাম বদলের দাবি জানিয়ে তাঁদের কাছে অহরহ ফোন আসছে অজ্ঞাত নম্বর থেকে। দেওয়া হচ্ছে নাম বদলের হুমকি। পাশাপাশি গরুর মাংসের পদ পরিবেশন করলে, অনুষ্ঠানে হাঙ্গামা বাঁধানোরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা অর্জুন করের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের চাপের মুখে পড়ে অবশেষে অনুষ্ঠানের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল নোট। কলকাতা বিফ ফেস্টিভ্যাল বদলে তাঁরা এবার অনুষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘কলকাতা বিপ* ফেস্টিভ্যাল’। অর্জুনের দাবি, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯ টা নাগাদ নাম বদলের পরেই ক্রমশ কমতে থাকে হুমকি, হুঁশিয়ারি। যদিও এ বিষয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। লালবাজারের সাইবার সেলে অভিযোগ জানাতে পারেন তাঁরা।
গোলমালের সূত্রপাত ফেসবুকে একটি পোস্ট ঘিরে। আগামী ২৩ শে জুন দিনভর শহরে একটি খাওয়া দাওয়ার অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চলেছে দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল নোট। সেখানে সারা দিন গরুর মাংসের বিভিন্ন পদের সঙ্গে মিলবে শুয়োরের মাংসেরও বিভিন্ন পদ। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তে জনপ্রিয়তা পায় পোস্টটি। চলতে থাকে শেয়ারের পালা। ইচ্ছুক ব্যক্তিরা কমেন্টও করেন অকাতরে। অনুষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয় কলকাতা বিফ ফেস্টিভ্যাল। বিতর্কের সূত্রপাত এই নাম নিয়েই। সোশ্যাল মিডিয়াতেই এই নামের বিরোধিতা করতে শুরু করেন একদল নেটিজেন। এরপর তা গড়ায় হুমকিতে। অশালীন গালিগালাজের পাশাপাশি খুনের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ অন্যতম উদ্যোক্তা অর্জুন করের। অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে হাঙ্গামা বাঁধানোরও হুমকি দেওয়া হয় তাঁদের। এরপরই অনুষ্ঠানের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তারা। চূড়ান্ত রসবোধের পরিচয় দিয়ে অনুষ্ঠানের নাম বদলে করা হয় ‘কলকাতা বিপ* ফেস্টিভ্যাল’।
অর্জুনের দাবি, নাম বদলের পর থেকেই কমে আসে হুমকির সংখ্যা। তবে বিরোধিতা হলেও, শহরের বেশিরভাগ মানুষ যে অনুষ্ঠানের সঙ্গেই আছেন, তা বোঝা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্টের বহর দেখলে। পরিস্থিতি এমনই যে প্রথমে সংস্থা ঠিক করেছিল দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে একটি রেস্তোরাঁয় হবে অনুষ্ঠানটি, কিন্তু মানুষের প্রবল উৎসাহ দেখে অনুষ্ঠান সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সদর স্ট্রিটের একটি হোটেলের লনে। অর্জুন করের দাবি, তাঁরা খাদ্যের রাজনীতিকরণে বিশ্বাসী নন। এভাবে একটি খাওয়ার আসরে জোর করে রাজনীতি টেনে এনে গোলমাল পাঁকানো দেখে স্তম্ভিত শহরবাসীর একাংশও।
এর আগেও কবিতা লিখে হিন্দুত্ববাদীদের হুমকির মুখে পড়েছিলেন কবি শ্রীজাত। এবার খাবারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেনজির আক্রমণের মুখে পড়লেন উদ্যোক্তারা।
Comments are closed.