দিনটা ছিল ৭ জুন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মুখে যে সাদা নীল মাস্ক পরেছিলেন, তাতে ছিল বাংলার মানচিত্র। মাঝে লেখা ‘মা’। করোনা ও আমফান পরিস্থিতির মধ্যে বিরোধী নেতারা যখন মাস্কে লাগিয়েছেন দলীয় প্রতীক তখন মুখ্যমন্ত্রী ‘মা’ লেখা মাস্ক প্রশংসা কুড়িয়েছিল বিভিন্ন মহলের। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার অন্যতম অস্ত্র সেই মাস্ককে এবার আকর্ষক করে তুলতে অভিনব উদ্যোগ মমতা ব্যানার্জি সরকারের। রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় বানানো হচ্ছে নতুন এক রকম ডিজাইনের মাস্ক। থ্রি লেয়ার বিশিষ্ট এই মাস্কের উপর লেখা থাকবে ‘বাংলা আমার মা’। তার ঠিক নীচে ছোট ছোট হরফে লেখা থাকবে ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার’। এই ভাবেই মাস্কের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ও বাংলার ব্রান্ডিং, দু’টোই করতে চাইছে রাজ্য সরকার।
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস্কের ক্যাচলাইন লিখেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। মাস্ক সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের সংস্থা ‘বিশ্ববাংলা মার্কেটিং কর্পোরেশন লিমিটেড’কে। জানা গিয়েছে বাংলার নেতা-মন্ত্রী, সরকারি আধিকারিক, পুলিশ অফিসার ও কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই মাস্ক বিলির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আপাতত প্রায় ৬ লক্ষ এই ধরনের মাস্কের বরাত দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, মাস্কের মাপ কী হবে, রঙ কেমন হবে, সবই ঠিক করে দেওয়া হয়েছে নবান্ন থেকে। বিভিন্ন মুখের মাপ অনুযায়ী, বড় মাস্কগুলির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ রাখা হচ্ছে যথাক্রমে ৭.৫ ও ৫.৫ ইঞ্চি। ছোট মাস্কগুলো দৈর্ঘ্যে ৫.৫ ইঞ্চি এবং চওড়া ৪.৫ ইঞ্চি। আকাশি, সবুজ, গাঢ় নীল, হালকা নীল, হলুদ ও হালকা ধূসর, এই সব রংয়ের মাস্ক তৈরি হবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আজ পোশাকের সঙ্গে সমান জরুরি হয়ে উঠেছে মাস্ক। আগে যা ছিল শুধু সংক্রমণ থামানোর একটা অস্ত্র, তাতে এখন লেগেছে ফ্যাশনের ছোঁয়া। পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রের উপর ‘মা’ লেখা সাদা-নীল মাস্ক পরে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করার পর জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই মাস্ক। ‘মা’ লেখা মাস্কে বাজার ছেয়ে যায়। সেটা পর্যবেক্ষণ করেই সরকারের এই উদ্যোগ। জানা যাচ্ছে, রাজ্য সরকারের তরফে যে নতুন ডিজাইনের মাস্ক বানাতে দেওয়া হয়েছে, তাতে ‘মা’ লেখা যেমন থাকছে তা বাজার চলতি মাস্কের চেয়ে দেখতেও অন্য রকম হবে। এখানেই রাজ্য সরকারের ব্র্যান্ডিংয়ের জোর বলে মনে করছে নবান্ন।
করোনার পরিস্থিতি যত এগিয়েছে মাস্কের ডিজাইনেও এসেছে নিত্যনতুন বৈচিত্র্য। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ক্লাব, সংগঠন নিজেদের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বিশেষ ডিজাইনের মাস্ক বানিয়েছে। মোহনবাগান ও ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের পতাকার রং ও লোগো দিয়ে বানানো মাস্কও এখন বাজারে হিট। এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে দলের বহু নেতা-কর্মীর মুখে এখন গেরুয়া মাস্ক। তাতে বিজেপির প্রতীক পদ্মফুল আঁকা। সিপিএমের নেতা-কর্মী সমর্থকদের অনেককে দেখা যাচ্ছে দলীয় প্রতীক আঁকা লাল কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে। কলকাতা পুরসভা থেকে যে সব মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে, সেটা সবুজ কাপড় দিয়ে বানানো, তার উপর কেএমসি লেখা।
Comments are closed.