Bengal Model: কংগ্রেসের বাঁচার একটাই উপায়, মমতাকে সভানেত্রী করে ফেরান, মন্তব্য সিনিয়ার সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের

সোমবার ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হয়েছে সিনিয়ার সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের ‘The road ahead for Mamata’ নামের প্রবন্ধ। সেই প্রবন্ধে বিবিসির প্রাক্তন কর্তা আগামিদিনে মমতা ব্যানার্জিকে যে যে সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে তার তালিকার পাশাপাশি জোর দিয়েছেন বেঙ্গল মডেলের উপর। পাশাপাশি তাঁর দাওয়াই, মমতাকে কংগ্রেস সভানেত্রী করে ফেরান হোক। তৃণমূলে মিশে যাক কংগ্রেস। 

সুবীর ভৌমিকের মতে আগামিদিনে মমতা ব্যানার্জি নিজেকে জাতীয় মুখ হিসেবে তুলে ধরতে গেলে প্রয়োজন একটি মডেলের। সেই মডেল পরিচিত হবে বেঙ্গল মডেল হিসেবে। যেখানে সংস্কৃতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিশা মিলবে। কী সেই দিশা, জানতে TheBengalStory কথা বলেছিল সিনিয়ার সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের সঙ্গে। 

 

প্রশ্ন: বাংলায় বিপুল জয়ের পর মমতা ব্যানার্জি দেশের প্রধান মোদী বিরোধী রাজনীতিবিদ হিসেবে উঠে এসেছেন। আপনার কি মনে হয় এবার জাতীয় প্রেক্ষাপটে মমতার নেতৃত্ব দেওয়ার পালা? 

সুবীর ভৌমিক: বাংলার ইতিহাসে রাজনীতিবিদ হিসেবে মমতা ব্যানার্জির অ্যাচিভমেন্ট অনন্য। কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে নিজে দল গড়ে প্রথমে প্রধান বিরোধী দল তারপর মুখ্যমন্ত্রী, টানা তিনবার। চিত্তরঞ্জন দাশ থেকে শুরু করে প্রণব মুখার্জি, কারও এমন সাফল্য আছে? শেখ হাসিনা উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুব সফল কিন্তু গত দুটো নির্বাচন উনি ক্ষমতায় থেকে লড়েছেন। মমতা রাজ্যে ক্ষমতায় বটে, কিন্তু তাঁকে লড়তে হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে। যে বিজেপির হাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী, এমন কী নির্বাচন কমিশন। তারপর দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়, ভাবা যায় না!

 

প্রশ্ন: জাতীয় প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের অবস্থা কি মোদী বিরোধী লড়াইকে দুর্বল করে দিচ্ছে?  

সুবীর ভৌমিক: আমি তো বলব, কংগ্রেস যদি বাঁচতে চায় এই মুহূর্তে মমতা ব্যানার্জিকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করুক। তৃণমূলের সঙ্গে মিশে যাক কংগ্রেস। যে সমস্ত নেতারা কংগ্রেস ছেড়ে সাফল্য পেয়েছেন তাঁদের সম্মিলিত ঘর ওয়াপসি না হলে কংগ্রেসের হাল ফেরা সম্ভব নয়। নেতৃত্বে থাকুন মমতা ব্যানার্জি। আঞ্চলিক দলের তকমা বাদ দিয়ে একটা জাতীয় প্লাটফর্ম পেলে সুবিধা হবে মমতা ব্যানার্জির। কংগ্রেস সভানেত্রী স্বভাবতই প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জার। কংগ্রেসকে মানতে হবে, মমতা ব্যানার্জি এখন দেশে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মোদী বিরোধী মুখ। 

চিত্তরঞ্জন দাশ থেকে নেতাজি হয়ে প্রণব বাবু, কংগ্রেস কোনোদিনই বাংলার নেতাদের যোগ্য সম্মান দেয়নি। এখন সেই ঐতিহাসিক ভুল শুধরে নেওয়ার সময় এসেছে। সিদ্ধান্ত নিন রাহুল-সোনিয়া গান্ধী। 

এবার প্রশ্ন হল, জাতীয় নেতা হতে কি কেবল এটাই দরকার? আমি বলব একটা নির্দিষ্ট রূপরেখা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যেমন, মোদী নিজেকে প্রজেক্ট করলেন গুজরাত মডেলের জনক হিসেবে। ঠিক তেমন মমতার হাতেও একটা বেঙ্গল মডেল থাকতে হবে। 

 

প্রশ্ন: বেঙ্গল মডেল কী? 

সুবীর ভৌমিক: গুজরাত মডেলের মত অন্তঃসার শূন্য মডেলে হবে না। বাংলার চিরন্তন ইনক্লুসিভ জাতীয়তাবাদ হবে এই মডেলের ভিত্তি। ভাষা এবং সংস্কৃতি হবে বাহন। তারপর তাকাতে হবে কর্মসংস্থানের দিকে, কারণ সেটাই আসল। মুখ্যমন্ত্রীকে এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে যেখানে বড় মাত্রায় কর্মসংস্থান করা যায়। 

এই কাজে পশ্চিম বাংলা মডেল হিসেবে রাখতে পারে বাংলাদেশকে। ইতিমধ্যেই অগ্রগতির বেশ কিছু মানদণ্ডে বাংলাদেশ ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের যা মানব সম্পদ এবং পরিকাঠামো, তাতে ঢাকাকে ঠেকানো মুশকিল। সেই সুযোগ কাজে লাগাক পশ্চিম বাংলা। যে সমস্ত বহুজাতিক সংস্থা বাংলাদেশে বিনিয়োগে রাজি তারা পশ্চিমবঙ্গে কেন বিনিয়োগ করবে না? ভেবে দেখতে হবে। কারণ বাংলাদেশের তুলনায় এই বাংলায় বিদ্যুৎ, বন্দর, পরিকাঠামো সহজলভ্য, তাহলে আমরা পারব না কেন? অর্থাৎ লগ্নি টানার কাজ করতেই হবে। আমি মনে করি, রাজনৈতিকভাবে কোনোদিন দুই বাংলা এক হবে না ঠিকই কিন্তু সংস্কৃতি ও অর্থনীতি দিয়ে আমরা সেই দেওয়াল পেরোতে পারি। এটা করা গেলে সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের ডিভিডেন্ড পাবেন দুই বাংলার মানুষই। কারণ দেশভাগের আগে সম্পদ, শিল্পায়ন থেকে সংস্কৃতি, দেশের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা রাজ্যের নাম ছিল বাংলা। আগামী দিনেও সেটাই হোক পথ।

বাংলায় থাকেন কিন্তু মাতৃভাষা বাংলা নয়, গোর্খা, রাজবংশী, আদিবাসীদের যাতে বরাভয় দেওয়া যায় যে তাঁরা বাংলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, সেটাও মুখ্যমন্ত্রীকে যত্ন নিয়ে দেখতে হবে। একইসঙ্গে লড়তে হবে বিজেপির বিরুদ্ধেও।

সিনিয়ার সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক বলছেন, আমাদের মত নবীন জনসংখ্যা সম্পন্ন দেশে কর্মসংস্থানকে এড়িয়ে বারবার ভোটে জেতা যাবে না। তাই বাংলার সবাইকে কাছে টেনে নেওয়ার চিরাচরিত সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে কর্মসংস্থানের বিকল্প মডেল তুলে ধরতে হবে মমতা ব্যানার্জিকে। 

Comments are closed.