মাত্র ক’দিন আগেই আকাশ ছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছেছিল শেয়ার বাজার। সেনসেক্স সূচক পেরিয়েছিল ৪২ হাজারের অঙ্ক। কিন্তু শেয়ার বাজারে এই খুশির ভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আচমকা করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে অভিঘাত এড়াতে পারেনি দালাল স্ট্রিট। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে সূচকের আকাশছোঁয়া বৃদ্ধি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায়, যে সার্কিট ব্রেক অবধি করতে হয় শেয়ার বাজার কর্তৃপক্ষকে। এক একদিনে লগ্নিকারীদের খাতা থেকে স্রেফ উবে গিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
কী করবেন লগ্নিকারীরা?
এখন প্রশ্ন হল, এই পরিস্থিতিতে সাধারণ লগ্নিকারীরা কী করবেন? শেয়ার বাজারের সূচক যখন এমন গতিতে পড়তে থাকে তখন শেয়ার বেচা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ তাতে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা ষোলোআনা। আর এর জেরেই প্রবল চাপে পড়েছেন স্বল্প মেয়াদে লগ্নিকারীরা। কারণ তাঁদের হাতে সময় কম। ফলে বাজার না উঠলে বিপুল লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
সুবিধা কাদের?
শেয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন দীর্ঘমেয়াদে লগ্নি করেছেন যাঁরা। কারণ বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, সূচক পড়ছে ঠিকই কিন্তু একই গতিতে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর বিরাট সম্ভাবনা আছে। এর আগে এমন বিপুল পতনের পরও দ্বিগুণ শক্তিতে আবার উঠে দাঁড়িয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে সূচক। দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নিকারীদের পুষিয়ে গিয়েছে লোকসান। ফলে যাঁদের হাতে সময় রয়েছে, তাঁদের এই পরিস্থিতিতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
কর সাশ্রয়ে বড় সুযোগ
বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতির জেরে বাজারের এই বেনজির পতনের প্রেক্ষিতে কি কেবলই দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে লগ্নিকারীদের জন্য? শেয়ার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়? এই বেনজির সময়ের গর্ভেই লুকিয়ে রয়েছে একটি সুসংবাদ? এটাই কি best time to buy shares and stocks?
তবে সেই সুযোগ পাবেন, ট্যাক্স বাঁচাতে যাঁরা এখনও কোনও ইনভেস্টমেন্ট করে উঠতে পারেননি, তাঁরা। কর সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ইএলএস ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন।
When to Buy Stocks for Beginners?
যাঁরা ৩০% ও ২০% ট্যাক্স স্ল্যাবের আওতায় পড়ছেন, তাঁরা 80C ধারায় দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করলে, এক্ষেত্রে প্রকৃত লগ্নি দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা এবং ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এর অর্থ হল, বাজার আরও পড়লেও হাতেনাতে লোকসানের আশঙ্কা কম। কিন্তু পরে স্বাভাবিক নিয়মে বাজার চড়লে, বিপুল লাভের দেখা মিলতেই পারে।
কোথায় লগ্নি?
এসআইপি চালিয়ে না যাওয়ার কোনও কারণ নেই। ইনভেস্ট করা যেতে পারে ইল্ডে। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে শেয়ার ও বন্ড বিক্রির ধুম পড়লে ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য তলানিতে ঠেকে। বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক তাই। এই অবস্থায় বাজারে বন্ডের দামের বিপুল পতন ঠেকাতে এবং নগদের যোগান বাড়াতে আরবিআই ৪০ হাজার কোটির বন্ড কিনবে। ডলারের দাম কমাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক খোলা বাজারে ডলার বিক্রি করতে পারে, এমন সম্ভাবনাও ক্রমেই আরও উজ্জ্বল হচ্ছে।
বেশি ঝুঁকি এড়াতে যাঁরা শেয়ার বাজারের বদলে মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা রেখেছেন, লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরাও। তবে এক্ষেত্রেও ঝুঁকি বেশি স্বল্প মেয়াদি লগ্নিকারীদের। তুলনায় একটু সুরক্ষিত দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নিকারীদের সম্পদ।
অর্থাৎ একটা জিনিস স্পষ্ট, বাজারের পতনের হার এত বেশি, যে ক্ষতি বা লোকসানের হিসেব কষতে বসা এখন সময় নষ্টের সামিল। তার বদলে মেনে চলতে পারেন এই ৫ টি সূত্র।
ক. দীর্ঘমেয়াদে লগ্নি করেছেন যাঁরা, চোখ বন্ধ করে শেয়ার ও ইক্যুইটি ফান্ডে সেই লগ্নি ধরে রাখুন।
খ. এসআইপি যেমন চলছে চলুক।
গ. ইনডেক্স আর ডিভিডেন্ড ইল্ড ফান্ডে লগ্নি এখন ভালো অপশন।
ঘ. ভারত সরকারের সিনিয়র সিটিজেনস বন্ডে লগ্নি করতে পারেন।
ঙ. সস্তায় ভালো শেয়ার কেনার এটাই সুবর্ণ সুযোগ (best time to buy shares and stocks) – এটা কাজে লাগান।
এই পরিস্থিতিতে শেয়ারে বিপুল লগ্নি করা সংস্থাগুলোর মধ্যে আশঙ্কা বাড়ছে। তারা কি বাই ব্যাকের পথে যাবে? তা এখনও পরিষ্কার নয়।
Comments are closed.