দুপুরের নিস্তব্ধতাকে ছিন্নভিন্ন করে গুলির শব্দে কেঁপে উঠল নিউটাউনের সুখবৃষ্টি আবাসন চত্বর। ২৫ মিনিট ধরে চলা গুলির লড়াই অবশেষে ধরাশায়ী পাঞ্জাবের দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী জয়পাল সিংহ ভাল্লার এবং যশপ্রীত খারার। পুলিশ খুন, রেপ, ব্যাঙ্ক ডাকাতি, তলাবাজি, অপহরণ, মাদক পাচার, আর্মস ডিলিং সহ কমপক্ষে ৪০ টিরও বেশি মামলায় অভিযুক্ত। পাঞ্জাব পুলিশ দুজনের মাথার ধাম ঘোষণা করেছিল ১৫ লক্ষ টাকা।
শহর কলকাতার উপকণ্ঠে এই রোমহর্ষক ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। দুষ্কৃতী দমনে এই দুর্ধর্ষ অভিযানে এসটিএফের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে বিধাননগর পুলিশ। সশরীরে ঘটনাস্থলে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার সুপ্রতিম সরকার। শুটআউটের খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই আলোচনা শুরু হয়েছে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে নিয়ে।
বাংলা সাহিত্যের পাঠকমহলে সুপরিচিত একটি নাম সুপ্রতিম সরকার। দুঁদে পুলিশ কর্তার পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি বেস্টসেলার বইয়ের লেখকও।
১৯৯৭ ব্যাচের এই আইপিএস অফিসারের জন্ম কলকাতায়,৩০ মে ১৯৭১ সালে। ছোট থেকেই তুখোড় পড়াশোনায়। স্কুল জীবন কেটেছে সেন্ট লরেন্স হাইস্কুলে। পরে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে অর্থনীতিতে স্নাতক।
আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিকতা দিয়ে পেশাগত জীবনে শুরু। লেখালেখির নেশাও। পরে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। চাকরীজীবনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ছিলেন।
পুলিশ কর্তা হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করলেও ছাড়তে পারেননি লেখালেখি নেশা। কলকাতা পুলিশে কর্মরত অবস্থায় কলকাতা পুলিশেরই ফেসবুক পেজে ‘রহস্য রবিবার’ শীর্ষক ধারাবাহিক শুরু করলেন। কলকাতা পুলিশের ইতিহাসে সবথেকে চাঞ্চল্যকর কিছু কেস নিয়ে থ্রিলার সিরিজ।
বাস্তব ঘটনা এবং সুপ্রতিমের কলমের মুন্সিয়ানায় পাঠক মহলে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠল রহস্য রবিবার। পরে গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার নামে বই আকারে প্রকাশিত হয় বইমেলায়।
গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার সিরিজের তিনখানা বই গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার দ্বিতীয়খন্ড, এবং আবার গোয়েন্দাপীঠ আমাজনের ক্রাইম থ্রিলার মিস্ট্রি ক্যাটাগরিতে বিশ্বের ১০০ টি বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর বইগুলি ইংরেজি ভাষাতেই অনুবাদ করা হয়েছে।
রহস্যরোমাঞ্চের পাশাপাশি ক্রিকেট নিয়েও তিনি বাংলার প্রথমসারির পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন লিখে থাকেন।
দক্ষ পুলিশ কর্তা, সুলেখক সুপ্রতিম সরকারের নাম জড়িয়েছে বিতর্কেও। ২০১৯ সালে কলকাতার তৎকালীন নগরপাল রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই অভিযানের প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ধর্ণায় বসেন। আরো কয়েকজন অফিসার সহ সুপ্রতিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনিও ধর্ণায় ছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাঁকে দিল্লিতে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়।
২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ইন্ডিয়ান পুলিশ মেডেল, এবং ২০১৭ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া বিশেষ পুলিশ সম্মান পাওয়া সুপ্রতিম সরকার বর্তমানে বিধানগরের পুলিশ কমিশনার পদে আসীন রয়েছেন।
Comments are closed.