পাঁচ তারা HHI ভাড়া নিয়ে বাংলায় ভোট করাবে বিজেপি, নেওয়া হচ্ছে অভিজাত অতিথিশালাও
বাংলায় এই প্রথম পাঁচতারা হোটেল ভাড়া নিয়ে ভোট পরিচালনা করবে গেরুয়া শিবির
স্বাধীনতার পর বাংলা বহু ভোট দেখেছে। বিধান রায়ের আমল পেরিয়ে সিদ্ধার্থশঙ্কর, জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হয়ে বাংলা এখন মমতা ব্যানার্জির হাতে। কিন্তু এমনটা জীবনে দেখেনি বাঙালি। বাংলা দখলকে পাখির চোখ করে ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। আর সেই লক্ষ্যে এবার আস্ত পাঁচ তারা হোটেল ভাড়া নিয়ে ভোট পরিচালনা করবে ভারতীয় জনতা পার্টি।
সূত্রের খবর, হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনালের একটি অংশ ভাড়া নিয়েছে গেরুয়া শিবির। HHI থেকেই বিজেপির ভোট কৌশল সাজান হবে। বাইরে থেকে নেতারা এসে থাকবেন এই পাঁচ তারায়। এখানেই দৈনিক সাংবাদিক বৈঠক সারবেন বিজেপি নেতারা। এখানেই শেষ নয়, কলকাতা শহরের আরও একটি পাঁচতারা হোটেল এবং ৫-৬ টি অভিজাত অতিথিশালাও ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
প্রেস মিটের জন্য বুধবার হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনালে বিজেপির একটি মিডিয়া সেন্টারের উদ্বোধন হয়। নতুন মিডিয়া সেন্টারে বুধবার টালিগঞ্জের একাধিক অভিনেতা বিজেপিতে যোগ দেন।
ভোটের প্রচারের জন্য কোনো রাজনৈতিক দলের এভাবে পাঁচ তারা হোটেল ভাড়া নেওয়া বাংলায় এই প্রথম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজেপি নেতা বলেন, বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতির জন্য রাজ্যের মুরলীধর সেন লেনের পার্টি অফিসটি মেরামত করা হয়েছে, পাশাপাশি বিজেপির হেস্টিংসের পার্টি অফিসেও যথেষ্ট জায়গা। সেখানে এভাবে পাঁচ তারা হোটেল ভাড়া কেন নেওয়া হচ্ছে জানি না।
সূত্রের খবর, রাজ্য নেতারা বেশিরভাগ সময় বসবেন মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য পার্টি অফিসে। হেস্টিংসে মূলত আইটি সেল এবং অন্যান্য শাখার সদর। সেখানে বাইরের লোকের প্রবেশাধিকার নেই।
মিডিয়া সেন্টার তথা সাংবাদিক বৈঠকের জন্য একটি আলাদা জায়গা দরকার ছিল বঙ্গ বিজেপির। তাই হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল ভাড়া নেওয়া। বাংলার ভোটে প্রচার করতে দেশের বিভিন্ন অংশের বিজেপির নেতারা আসছেন। ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই বাড়বে সেই সংখ্যা। তাই পাঁচ তারার গোটা ২০ স্যুইট নিয়েছে বিজেপি। হাই প্রোফাইল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যেমন অমিত শাহ বা রাজনাথ সিংহের জন্য অবশ্য নিউ টাউনের ওয়েস্টইন হোটেলেই ব্যবস্থা করা হবে। অনেক নেতা পাঁচ তারা হোটেলে থাকতে আপত্তি করতে পারেন, সেকথা ভেবে শহরের একাধিক অভিজাত অতিথিশালা ভাড়া করছে গেরুয়া শিবির।
হেস্টিংসের পার্টি অফিসে নিয়মিত ২৫০ জনের রান্না হয়। শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি শুভেন্দু, রাজীবদের আলাদা করে ঘর দেওয়া হয়েছে সেখানে।
বিজেপির এই হোটেল ভাড়া প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, এখান থেকেই প্রমাণিত বিজেপি বড়লোকদের পার্টি, গরিব মানুষের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। যদিও ওঁদের এই খরচ বৃথা যাবে, বিজেপি বিধানসভায় হারতে চলেছে।
সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, বিজেপি নেতারা থাকছেন পাঁচ তারা হোটেলে আর খেতে যাচ্ছেন গরিব মানুষের বাড়ি! বিজেপির এই দ্বিচারিতা মানুষ ধরে ফেলেছে।
বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এখনও পার্টি অফিসেই থাকেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থাকেন পাম অ্যাভিনিউয়ের দুই কামরার ফ্ল্যাটে। মমতা ব্যানার্জি মুখমন্ত্রী হওয়ার পরেও কালীঘাটের বাড়িতেই থেকে গেছেন। রাজনৈতিক নেতাদের অনাড়ম্বর জীবন যাপন দেখে অভ্যস্ত বাঙালি বিজেপির পাঁচ তারা সংস্কৃতি কীভাবে নেবে? এটাই এখন বড়ো প্রশ্ন।
Comments are closed.