‘Bois Locker Room’, এই নামে ইনস্টাগ্রামে এক প্রাইভেট গ্রুপে কীভাবে গণধর্ষণ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা, মহিলাদের নিয়ে অশ্লীল পোস্ট এবং ধর্ষণে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে নাম জড়াল রাজধানী দিল্লির একাধিক নামী স্কুলের পড়ুয়ার!
করোনা পরিস্থিতিতে জেরবার দেশে এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া, ঘটনার তদন্তে নেমে চোখ কপালে উঠেছে পুলিশের। সমাজের উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত ছেলেদের এই কাণ্ড প্রকাশ্যে আসতে আলোচনা, সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দিল্লির অভিজাত পরিবারের একাধিক পড়ুয়ার বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ১৫ বছরের স্কুল পড়ুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। সেই ছাত্রকে জেরা করে আরও ২০ পড়ুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। সবারই বয়স ১৫-১৭ র মধ্যে!
ঠিক কী ঘটেছে?
পুলিশ সূত্রে খবর, একদল স্কুল পড়ুয়া ইনস্টাগ্রামে নিজেদের একটি গ্রুপ তৈরি করে। সেই গ্রুপের নাম রাখা হয় ‘Bois Locker Room’। এই গ্রুপের আলোচনার বিষয়বস্তু হল, স্কুল ছাত্রীদের গণধর্ষণ এবং নানা বিকৃত ও কুরুচিকর বিষয়।
প্রায় ১০০ মেম্বার নিয়ে তৈরি ওই গ্রুপে দক্ষিণ দিল্লির চার-পাঁচটি স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বেশ কয়েকজন ছাত্র যুক্ত রয়েছে বলে পুলিশ জেনেছে। চ্যাটে খুব সাবলীলভাবে তারা স্কুলছাত্রীদের গণধর্ষণ, যৌন হেনস্থা, সহপাঠিনীদের শরীর নিয়ে আলোচনা চালায়। সম্প্রতি এক মহিলা নেটিজেন এই গ্রুপের কুরুচিপূর্ণ কথোপকথন ফাঁস করে দেন। তারপরেও এই সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে বিকৃত আলোচনা চলে। কীভাবে ওই মহিলাকে ‘জব্দ’ করা যায় তা নিয়ে কথোপকথনে একজন ওই মহিলার ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে।
কীভাবে এই ইনস্টা গ্রুপ সবার নজরে এল?
গত ২ মে এই গ্রুপে নতুন যুক্ত হওয়া এক মেম্বার একজন মহিলাকে একটি কথোপকথনের স্ক্রিন শট পাঠায়। সেই স্ক্রিন শটটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে ওই মহিলা প্রথম এই গ্রুপের কথা সর্বসমক্ষে আনেন। এরপর বহু ইনস্টাগ্রাম ইউজার এই গ্রুপের অস্তিত্বের কথা জানতে পারেন। ছাত্রদের বিকৃত কথাবার্তা, কুরুচিকর ছবি চালাচালি সবার নজরে আসে।
ওই গ্রুপের কিছু ইউজার সহপাঠিনীদের ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতে থাকে। তার সঙ্গে কুরুচিকর মন্তব্য লেখা হয়। সেগুলি আবার হোয়াটসঅ্যাপ ও ট্যুইটারেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
তবে যে কয়েকজন এই ইনস্টা গ্রুপের খবর প্রথম পান তার মধ্যে শুভম সিংহ নামে এক সাইবার এক্সপার্ট জানান, এই ছবিগুলি এডিট করা এবং এই গ্রুপটি আর এক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম স্ন্যাপচার্টেও আছে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, বছর ১৯ এর এক কলেজ ছাত্রী অভিযোগ করেন, তাঁর ছবি বিকৃত করে এই সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ ছড়িয়েছে। এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় #boislockerroom ট্রেন্ড। গ্রুপের এমন স্ক্রিনশটও পাওয়া গিয়েছে, যেখানে পড়ুয়ারা আলোচনা করছে, যে মহিলা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাঁর নগ্ন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হবে।
পুলিশের তদন্ত
এই ঘটনায় দক্ষিণ দিল্লির একটি নামী স্কুলের ছাত্রকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল তার মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে তদন্ত চালাচ্ছে। তাকে জেরা করে ওই গ্রুপের আরও ২০ জন ছাত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানাচ্ছে, ওই সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে যে ক’জন স্কুল পড়ুয়া আছে, সবাই এই আলোচনায় যুক্ত ছিল না। কয়েকজন সহপাঠিনীদের ছবি বিকৃত করে গ্রুপে চালাচালি করে এবং তাদের কীভাবে গণধর্ষণ করা যায় তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা চালায়। এদের মধ্যেই কেউ চ্যাটের স্ক্রিন শট ভাইরাল করে। পরে গ্রুপটি ডি অ্যাক্টিভেট করে দেওয়া হয়।
শুধু একটি স্কুলই নয়, জানা যাচ্ছে দক্ষিণ দিল্লির চার-পাঁচটি স্কুলের বহু ছাত্র এই ধরণের বিকৃত রুচির আলোচনা করছিল। নয়ডার একটি স্কুলের পড়ুয়ারাও এতে যুক্ত রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
Comments are closed.