অপরাজেয়: স্বামীর অত্যাচার বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছিল, সাইকেলে ঘুরে ঘুরে দই বড়া বিক্রি করছেন বিএসসি পাশ সুনীতা
১৯৯৮ সালে বিএসসি পাশ করেন। ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু গৃহ শিক্ষক বাবার সামর্থ্য না থাকায়, বিএএস পাস কোর্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন তিনি। পরে পরিবারের চাপে বিয়ে করতে এক প্রকার বাধ্য হন। যদিও দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে শ্বশুর বাড়িতে অত্যাচারিত হয়ে, অবশেষে শশুর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে ওঠেন। একরত্তি মেয়েকে নিয়ে বাঁচতে সাইকেল করে ঘুরে ঘুরে দইবড়া বিক্রি শুরু করেছেন সুনীতা চৌধুরী। নিজের লড়াইয়ের গল্প জানালেন TheBengalStory কে।
আর কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই সাইকেল নিয়ে বেরোবেন, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি করতে করতেই কথা বললেন সুনীতা। কতদিন হল এই কাজ করছেন? দেখুন পুজোর সময় এক জায়গায় দোকান দিয়েছিলাম। নভেম্বর মাস থেকে সাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছি। সুনিতা জানালেন, দুপুর থেকে শুরু করে ৮ টা ৯ টা পর্যন্ত বর্ধমান শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দই বড়া বিক্রি করেন।
এতক্ষন সাইকেল নিয়ে, কাজটা তো বেশ পরিশ্রমের…. দেখুন এছাড়া তো উপায় নেই। আমার একটি নয় বছরের মেয়ে রয়েছে। তাকে নিয়ে বাঁচতে হবে তো। সুনীতার অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই অকথ্য অত্যাচার করতেন স্বামী। তবে শেষ দু-তিন বছর অত্যাচারের মাত্রা সীমা ছাড়ায়। এমনকী ছোট মেয়েকেও তাঁর সঙ্গে মিশতে দিতেন না। সুনীতার চাঞ্চল্যকর দাবি, শেষের দিকে মেয়েকে তাঁর থেকে দূরে রাখতে একজন নেশাগ্রস্ত বন্ধুর কাছে মেয়েকে রেখে আসতেন তাঁর স্বামী। স্থানীয় পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনও সাহায্য পাননি তিনি। শেষে একপ্রকার বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন ছোট মেয়েকে নিয়ে।
বর্ধমানে ফিরে প্রথম তিন মাস নিজের দিদির বাড়িতে ছিলেন বলে জানালেন সুনীতা। সেখানেই দিদির কাছে দই বড়া বানানো শেখেন। বললেন, দেখুন আমার পুঁজি বলতে কিছুই ছিল না। তাই সাইকেল নিয়েই বেরিয়ে পড়ি। সংসারের কাজের পাশাপাশি, দোকানের জন্য কেনাকাটা থেকে শুরু করে দইবড়া তৈরি, পুরোটাই নিজে হাতে সামলান তিনি। বাড়ি ফিরে মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে বসেন।
ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার। নিজের স্বপ্ন নিয়ে বলতে গিয়ে জানালেন, জানেন ডাক্তারি পড়া হলো না, তারপরেও আমার বিয়ের জন্য মা-বাবা যে টাকা রেখেছিলেন সেটা দিয়ে চাকরীর জন্য পড়তে চিয়েছিলাম। বাড়ির লোক রাজি হলেন না। আসলে জীবনে খুব বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই বাঁচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু… গলায় বেশকিছুটা বিষণ্ণতার ছোঁয়া তাঁর।
বর্তমানে তাঁর ইচ্ছে একটি স্থায়ী দোকান দেওয়া। আপাতত ভোটার কার্ডের জন্য দৌড় ঝাঁপ করছেন। বললেন, শশুর বাড়িতেই আমার ভোটার কার্ড ছিল। এখানে কার্ডটা হয়ে গেলে রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুবিধাগুলি পেতাম। এখানে কার্ডের জন্য আবেদন করছেন? এখানে বললে বলছে যেখানে কার্ড ছিল সেখান থেকে লিখিয়ে আনতে। কিন্তু ওখানে গেলেই তো আবার মারধর করবে আমায়, মন্তব্য সুনীতার।
Comments are closed.