তৃণমূলই বিজেপি, ভুল বুঝে মানুষ ফিরছেন লাল ঝাণ্ডায়, বর্ধমান উত্তরের বাম প্রার্থী চণ্ডীচরণ আত্মবিশ্বাসী
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম ফিল। লকডাউন না হলে এত দিনে পি এইচ ডি হয়ে যেত। পছন্দের চাকরি না পাওয়ায়, পড়ার ফাঁকে বাবার সাইকেল সারানোর দোকান সামলান। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পর সেভাবে সময় পাচ্ছেন না। জানালেন, বর্ধমান উত্তরের সিপিএম প্রার্থী চন্ডীচরণ লেট।
১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় ভোট বর্ধমান উত্তরে। প্রচারের কাজে ব্যস্ততা তুঙ্গে, তারই মাঝে সময় দিলেন The Bengal Storyকে।
রাজ্যের এরকম একটা গুরুত্বপূর্ণ ভোটে লড়ার সুযোগ পেয়েছেন, আশা করেছিলেন টিকিট পাবেন? দেখুন, আমাদের পার্টিতে প্রার্থী করার প্রক্রিয়াটা অন্য সব দলের থেকে আলাদা। অবশ্যই নিজের নাম প্রার্থী হিসেবে শুনে ভালো লেগেছিল।
যে লড়াইটা আমি ছোট থেকে লড়ছি, প্রার্থী হওয়ার পর সেই যুদ্ধটা লড়তে অনেক সুবিধা হবে। সাধারণ মানুষের দুঃখগুলো তো চেনা, বলছেন সিপিএমের তরুণ মুখ।
২০১১, রাজ্যে পালাবদলের সময়ে চন্ডীচরণ বর্ধমান রাজ কলেজের ছাত্র। ছাত্র আন্দোলের মধ্যে দিয়েই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। পরিবারের বাকিরা সিপিএম সমর্থক হলেও, রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন কেউ।
ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে একবারে একুশের ভোটের ময়দানে। এই নির্বাচনকে অনেকেই বলছে বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। নিজের এই জার্নিটাকে কী ভাবে দেখছেন? তৃণমূলকে আক্রমণ করে সিপিএম প্রার্থীর উত্তর, দেখুন ২০১১ সালের পর লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না। একাধিক সময় শাসক দলের আক্রমণ মুখে পড়তে হয়েছে। মৃদু হেসে বললেন, কতবার যে মার খেয়েছি গুনে বলতে পারবো না। তবে ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের পর মা বাবাও ভয় পেয়েছিলেন, যদিও রাজনীতি ছাড়তে বলেন নি। কিন্তু… কোন মা বাবা চায় তাঁর ছেলে মারধর খাক?
২০১৪ লোকসভা ভোটের পর তাঁকে একদল দুষ্কৃতী ঘিরে ধরে বলাতে চেয়েছিল, সিপিএম করে ভুল করেছেন। অত মার মেরেও আমার মুখ থেকে একটা কথাও বলাতে পারেনি। সাত বছর পরেও বর্ধমান উত্তরের সিপিএম প্রার্থীর গলায় সেই একই জেদ।
২০১৯ লোকসভা ভোটে রাজ্যে সিপিএমের ভরাডুবি, দু’বছরের মধ্যে অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে কতটা আশাবাদী? পোড়খাওয়া রাজনীতিকদের মত তরুণ প্রার্থী জানালেন, দেখুন তৃণমূল সন্ত্রাস করে আমাদের আটকাতে চেয়েছিল, আর বিজেপি সেই সুযোগটা নিয়েছে। সবাই বলছে আমাদের একটা বিরাট ভোট বিজেপিতে গিয়েছে, কথাটা ভুল বলবো না, তবে শুধু যে আমাদের ভোট গিয়েছে এটা ভাবাও ভুল।
আপনি বলতে চাইছেন তৃণমূলের ভোট বিজেপি পেয়েছে? চন্ডীর কটাক্ষ, দেখুন ইভিএমের সামনে তো আমি, আপনি দেখতে যাইনি কার ভোট কোথায় গিয়েছে? তাঁর টিপ্পনী, দেখুন এমন অনেক বুথেই তো উনিশে তৃণমূল কর্মী ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। কিন্তু রেজাল্টে দেখা গিয়েছে ওই বুথে বিজেপি এগিয়ে!
বর্ধমান উত্তরে জয় নিয়ে কতটা আশাবাদী? তৃণমূলের সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বিজেপির কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলার বিজেপি দলটাই তো তৃণমূল! চণ্ডীচরণের দাবি, ভুল বুঝতে পেরে মানুষ লালঝাণ্ডার তলায় ফিরছেন।
অবসরে বই পড়তে, ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসেন। জীবনে সবথেকে বেশি প্রভাবিত হন নিজের মা’কে দেখে। বললেন, মা লোকের বাড়িতে কাজ করেছেন, মাঠে কাজ করেছেন, তারপরেও সংসার সামলেছেন।
পরিবর্তন নিয়ে আশাবাদী সিপিএম প্রার্থী বললেন, স্বপ্ন বলতে, আমার ইচ্ছে আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যে কোনও বেকার যুবক থাকবে না, সবাই নিজের যোগ্যতা মত কোনও কাজে যুক্ত হবে। সংযুক্ত মোর্চা সরকার গড়লে সেটাই হবে, মিলিয়ে নেবেন।
Comments are closed.