CAA: নাগরিকত্ব প্রমাণে লাগবে ধর্মীয় পরিচিতির প্রমাণ, সরকারি নথির রিলিজিয়ন কলামে থাকতে হবে ধর্মের উল্লেখ
গত ডিসেম্বর মাসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার পর এখন চলছে তার বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে। অর্থাৎ, কীভাবে এই আইন কার্যকর করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই বিধি চূড়ান্ত হলে সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইন কার্যকর করার দিকে এগোবে কেন্দ্র। এই প্রেক্ষিতে সামনে এসেছে আইনের একটি অন্যতম নিয়ম, যা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বেধেছে। সূত্রের খবর, সিএএ’র যে বিধি তৈরি হচ্ছে, তাতে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে আবেদনকারীকে দিতে হবে তাঁর ধর্মের প্রমাণ। যদিও তিনি যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে এদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তার কোনও প্রমাণ দিতে হবে না বলেই প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে। যদিও সিএএ’র বিধিতে নির্দিষ্টভাবে কী থাকছে, তা এখনও চূড়ান্ত করেনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
প্রমাণ দাও, নাগরিক হও
সিএএ অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্থান থেকে ভারতে আগত হিন্দু সহ ছয় ধর্মের মানুষকে এদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সূত্রের খবর, কীভাবে এই ছয় ধর্মের মানুষকে চিহ্নিত করা হবে তা নিয়েই খানিকটা দ্বিধাবিভক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকরা। কারণ, কে কোন ধর্মের মানুষ তা কীভাবে প্রমাণিত হবে, সেই বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে করছেন আধিকারিকদের একাংশ। জানা যাচ্ছে, আধিকারিকরা প্রাথমিকভাবে ঠিক করেছেন, কোনও ব্যক্তি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে তৈরি করা তাঁর কোনও সরকারি নথিতে ‘রিলিজিয়ন’ কলামে নিজেকে হিন্দু বা অন্য পাঁচ ধর্মের বলে উল্লেখ করে থাকলে, তা নাগরিকত্ব পেতে দাখিল করতে হবে। অর্থাৎ, ২০১৪ সালের আগে থেকে এদেশে বসবাসকারী কোনও আবেদনকারীর কাছে যে কোনও সরকারি নথি, যার কোনও একটিতে তাঁর ধর্মীয় পরিচয়ের উল্লেখ রয়েছে, তা নাগরিকত্ব পেতে প্রমাণ হিসেবে দাখিল করতে হবে কেন্দ্রের কাছে।
যদিও সিএএ’র বিধিতে এই বিষয়টি থাকবে কিনা এখনও চূড়ান্ত নয়। কারণ, অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কেউ ‘রিলিজিয়ন’ কলামে নিজের ধর্মের কথা উল্লেখ নাও করে থাকতে পারেন। কেউ যদি এই ছয় ধর্মের অন্তর্ভুক্ত মানুষ হন, কিন্তু ধর্মীয় পরিচিতি ব্যবহার না করে থাকেন, তবে তিনি কীভাবে নাগরিকত্ব পাবেন? বিশেষ করে সিএএ নিয়ে বিরোধীরা যখন দেশজুড়ে প্রচার চালাচ্ছে, সেখানে কেন্দ্র চাইছে বিষয়টিকে যতটা সম্ভব সরল করতে। যাতে ওই ছয় ধর্মের মানুষকে নাগরিকত্ব পেতে হয়রানির মধ্যে পড়তে না হয়। তাই ধর্মীয় পরিচিতির প্রমাণ চাওয়া আদৌ যুক্তিযুক্ত হবে কিনা তাও ভেবে দেখছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকরা।
ধর্মীয় কারণে অত্যাচার
কেন্দ্র জানিয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, ক্রিশ্চান, পার্সি ধর্মাবলম্বীকে ভারতের নাগরিকত্ব দেবে। তবে তাদের ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের আগে এদেশে আসতে হবে। তাদের ধর্মীয় পরিচিতি কীভাবে জানা যাবে, এই জটিলতার মধ্যেই আরও জানা যাচ্ছে, তারা যে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে ওই তিন দেশে থেকে এসেছেন তার কোনও প্রমাণ দিতে হবে না। বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, প্রতিবেশী এই তিন দেশে কেউ ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়েছেন, তা এখন কী করে প্রমাণ হবে? সূত্রের খবর, সিএএ’র যে বিধি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তৈরি করছে তাতে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে এদেশে আসার কোনও প্রমাণ দিতে হবে না। শুধু তাঁর ধর্মের প্রমাণপত্র দাখিল করলেই হবে। এর পাশাপাশি আর কী কী বিষয় এই বিধিতে থাকবে তা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
রাজ্যের বিরোধিতা?
সিএএ বিরোধিতায় ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, পঞ্জাব ও রাজস্থান বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এই রাজ্যগুলিতে কীভাবে সিএএ লাগু করা হবে তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
Comments are closed.