‘আমাদের আইন, সমাজ, মূল্যবোধ সমলিঙ্গ বিবাহকে স্বীকৃতি দেয় না। বিবাহ হল প্রতিশ্রুতিরক্ষা। যা সমলিঙ্গের বিবাহে থাকে না।’ সমলিঙ্গের বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করে মন্তব্য করল কেন্দ্র।
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়েছিল সমকামিতা অপরাধ নয়। তার দু’বছর পর সোমবার সমলিঙ্গ বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করে দিল্লি হাইকোর্টে সওয়াল করলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইনের আওতায় সমলিঙ্গে বিয়ের আর্জি জানিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর দিল্লি হাইকোর্টে পিটিশন জমা করেন চারজন। বিভিন্ন সময় পুরুষ-পুরুষকে কিংবা নারী-নারীকে বিয়ে করতে চাইলেও নানাদিক থেকে বাধা আসায় সাংবিধানিক অধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছিল হলফনামায়। যার প্রেক্ষিতে সোমবার দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি এন প্যাটেল ও বিচারপতি প্রতীক জালানের ডিভিশন বেঞ্চে সলিসিটর জেনারেল বলেন, আমাদের সমাজ বিবাহ নাম একটি প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাসী। একই লিঙ্গের দুটি মানুষ পরস্পরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তা ঠিক পবিত্র সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। হিন্দু বিবাহ মতে এটি ‘নিষিদ্ধ সম্পর্ক’। এর পরেই অবশ্য এই মত একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত বলে জানান সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। এরপর তিনি ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় তুলে ধরে বলেন, সমকামীদের আরও বেশি করে ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে জোর করে প্রতিবাদী সত্তা তৈরি করে। এর বেশি আর কিছুই হয় না।
এই সওয়ালের জবাবে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি প্রতীক জালান মন্তব্য করেন, বিশ্বের সর্বত্রই এই মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। দু’জন মহিলা যখন একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করছেন তখন কিন্তু একজন অন্য জনকে স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। তাছাড়া সমলিঙ্গে বিয়ে করলেই যে স্বামী বা স্ত্রী বলতেই হবে এরকম বাধ্যবাধকতা নেই।
আবেদনকারী অভিজিৎ আইয়ার মিত্র ও অন্যান্যরা জানান সব সমলিঙ্গ বিবাহ আইন মেনে রেজিস্ট্রি করে হচ্ছে না। আর অনেকেই তা লুকিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তি দেওয়া হয়েছিল যে সুপ্রিম কোর্ট ইতোমধ্যে রায় দিয়েছে যে সমকামী সম্পর্কের কোনও আইনি বাধা নেই। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন অস্বীকার করা মানে তো সাম্যের অধিকার এবং জীবনের অধিকার থেকে বঞ্ছিত হওয়া, যুক্তি তাঁদের। যার প্রেক্ষিতে দিল্লি হাইকোর্ট জানায়, সবদিক খতিয়ে দেখা হবে। যদিও সোমবার এই মামলা স্থগিত রাখে আদালত। অক্টোবরে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু তার আগে আদালত এমন কিছু প্রমাণ চেয়েছে, যেখানে সমলিঙ্গ বিবাহ হয়েছে কিন্তু আইন মেনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। কেন হয়নি তার কারণও দেখাতে হবে।
Comments are closed.