সংঘর্ষের আবহে অরুণাচল সীমান্তে ভুটানের জমি দখলে উদ্যত চিন! গালওয়ানে সেনা সরাচ্ছে দু’দেশ, হচ্ছে বাফার জোন

লাদাখে দাঁড়িয়ে মাত্র ক’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এলাকা বিস্তার ইস্যুতে নাম না করে চিনকে নিশানা করেছিলেন। বলেছিলেন, সম্প্রসারণবাদের দিন শেষ। ঠিক তার পরপরই সীমান্ত সমস্যা নিয়ে চিন কার্যত সংঘাতের নতুন ফ্রন্ট খুলে ফেলল। এবার শি জিনপিং সরকারের লক্ষ্য ভুটান!
সম্প্রতি ভারত, হংকং, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছে চিন। এবার সমস্যা চিন-ভুটান সীমান্তের পূর্ব সেক্টর নিয়ে। এই ভূখণ্ডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তথা দখল নিশ্চিত করতে চাইছে চিন। ইউরেশিয়ান টাইমসে ৬ জুলাই, ২০২০ প্রকাশিত ‘China Claims Territories In Bhutan, Raises Another Border Conflict With ‘Saviour’ India’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, বেজিংয়ের তরফে ভারতের নাম না করে বলা হয়েছে, চিন-ভুটান দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নিয়ে তৃতীয়পক্ষের নাক গলানোর দরকার নেই। প্রশ্ন হল, আগ বাড়িয়ে ভারতকে এমন পরামর্শের কারণ কী?
অরুণাচলপ্রদেশ নিয়ে চিনের দাবি দীর্ঘদিনের। এবার চিন-ভুটান সীমান্তের পূর্ব ভূখণ্ড দখলে আনতে পারলে অরুণাচলপ্রদেশের উপর নজর রাখা সুবিধাজনক হবে। তাই কি এই অংশ দখল করতে চাইছে শি জিনপিংয়ের সরকার? স্বভাবতই চিনের এই পদক্ষেপে প্রবল অসন্তোষ নয়াদিল্লিতে।
ইদানীং নেপালের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ভারত। সম্প্রতি ত্রুটিপূর্ণ ম্যাপ পাশ করেছে নেপালের পার্লামেন্ট। যেখানে ভারতীয় ভূখণ্ডকে নেপালের সরকারি মানচিত্রে স্থান দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ চিনের প্ররোচনায় ভারত বিরোধী মনোভাব নিচ্ছে নেপাল। চুপ করে বসে নেই ভারতও। ভারত মনে করছে, চিনের হাতের পুতুল হয়ে গিয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলি। এদিকে আচমকাই নেপালের কমিউনিস্ট পার্টিতে ওলি বিরোধী মনোভাব মাথাচাড়া দিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে, আসন টলমল করছে খোদ প্রধানমন্ত্রী ওলির। নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এমন পালাবদলে ভারতের হাত দেখছেন অনেকেই। কিন্তু নেপাল অসন্তোষ মেটার আগেই এবার চিনের বিস্তারবাদের খপ্পরে ভুটান।
জানা গিয়েছে, চিন-ভুটান সীমান্তে একটি স্যাংচুয়ারির উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ নিয়ে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটির অনলাইন বৈঠকে আচমকাই ওই এলাকায় নিজেদের দাবি পেশ করে চিন। ভুটানের দাবি, এই অংশ নিয়ে চিনের সঙ্গে কোনওদিনই সমস্যা ছিল না। অথচ চিনের দাবি, ৬৫০ বর্গ কিলোমিটার স্যাংচুয়ারি নিয়ে ভুটানের সঙ্গে দীর্ঘদিন বিবাদ চলছে। বৈঠকে দুই দেশের বক্তব্যই নথিভুক্ত হয়েছে। পরবর্তীতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় চিন এই ইস্যু তুললে, ভুটানও জবাব দিতে প্রস্তুত।
এদিকে সূত্রের খবর, সোমবার গালওয়ান ভ্যালি থেকে ১ কিলোমিটার পিছিয়ে গিয়েছে পিএলএ। পিছিয়ে এসেছে ভারতীয় সেনাও। তাহলে কি দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ফল দিচ্ছে? নাকি গালওয়ান নদীতে জলস্তর বেড়ে যাওয়াই এর কারণ? তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এদিকে চিন-ভুটানের সীমান্ত সমস্যার গতিপ্রকৃতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলছে ভারত। ওই এলাকা দখলে এনে আদতে অরুণাচল নিয়ে ভারতের উপর চাপ বাড়ানোই কি চিনের কৌশল? যদি তাই হয়, তাহলে ভারতের পাল্টা কৌশল কী হবে? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Comments are closed.