মোদী-সোনিয়া-মমতা সহ দেশের ২৪ মুখ্যমন্ত্রী, ৩৫০ জন সাংসদের ওপর চিনা নজরদারি! ট্র্যাক করা হচ্ছে তথ্য, সামনে এল বিস্ফোরক অভিযোগ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সহ দেশের দু’ডজন মুখ্যমন্ত্রী, সাড়ে তিনশো সাংসদ সহ প্রায় ১ হাজার ৩৫০ জন রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধির ওপর নজরদারি করছে চিন!
সর্বভারতীয় ইংরেজি সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, চিনা ওয়েবসাইট ঝেনহুয়া ডেটা ইনফরমেশন টেকনোলজি, যারা মূলত বিদেশি ব্যক্তিদের তথ্যে নজরদারির চেষ্টা করে থাকে বলে অভিযোগ, তারা ভারতের রাজনীতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের ডেটা ট্র্যাক করছে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্রে খবর, ওভারসিজ কি ইনফর্মেশন ডেটাবেস (OKIDB) ডেভলপ করেছে চিনা শেনঝেন ঝেনহুয়া ডেটা ইনফর্মেশন টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড। এদের সঙ্গে চিন সরকার এবং চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক আছে বলে দাবি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
কতজন ভারতীয় রাজনীতিক তাদের নজরদারিতে?
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি, বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম ছাড়াও ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলির নেতা, বাংলা, ওড়িশা সহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, এমনকী প্রধানমন্ত্রীর ওপর নজরদারি হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও বিগ ডেটা প্রযুক্তির মাধ্যমে।
এঁদের কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে? এই তথ্যগুলি দিয়ে কি ‘হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার’ করতে চায় চিন? প্রথমে বুঝতে হবে
এই ঝেনহুয়া ডেটা আসলে কী? ঝেনহুয়া ডেটা রাজনৈতিক ক্ষেত্র থেকে সরকার, ব্যবসা, প্রযুক্তি, মিডিয়া এবং নাগরিক সমাজের বিখ্যাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নজরে রাখে। চিনা গোয়েন্দা সংস্থা, সামরিক ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করার দাবি করে ঝেনহুয়া। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ডিজিটাল কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এরা একটি ডেটা লাইব্রেরি তৈরি করে। যার মধ্যে সংবাদসূত্র, কাগজপত্র, পেটেন্টস, বিডিং ডকুমেন্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যও অন্তর্ভুক্ত থাকে। এমনকী কোনও ক্ষেত্রে নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্যও এদের নজরে আছে। এটি একটি “রিলেশনাল ডেটাবেস” তৈরি করে, যা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং তথ্যগুলির মধ্যে সংযোগ রেকর্ড করে এবং তা বর্ণনাও করে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা তথ্য সর্বজনীন, তাহলে উদ্বেগের কারণ কী?
আসলে এখানে কেবল সোশাল মিডিয়া থেকেই তথ্য নেওয়া হচ্ছে না। বিশিষ্টদের আরও অনেক গোপনীয় তথ্য নেওয়া হচ্ছে যা চিন্তার কারণ। সর্বদা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে বিশিষ্টদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে এই চিনা সংস্থা। সেটা হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট কিংবা ফ্রেন্ডলিস্ট, ফলোয়ার্স। এমনকী কমেন্টস সেকশন, লোকেশন ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে চলে যেতে পারে অন্য দেশের সংস্থার হাতের মুঠোয়। এই তথ্য যাওয়ার অর্থ হল মারাত্মক। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এই তথ্য কাজে লাগাতে পারে বিদেশি শক্তি। আর সেখানেই উঠছে ‘হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার’ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এদেশের কোন কোন রাজনৈতিক নেতা চিনা অ্যাপের নজরবন্দি?
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্রে খবর, দুই জাতীয় রাজনৈতিক দল, বিজেপি ও কংগ্রেসের অন্তত ২০০ জনকে ট্র্যাক করা হচ্ছে। এছাড়া বামেদের প্রায় ৬০ জন প্রাক্তন ও বর্তমান সাংসদ, গান্ধী পরিবার সহ সমস্ত দলেরই শীর্ষ নেতৃত্ব রয়েছেন চিনা নজরদারিতে।
জানা যাচ্ছে, চিনের এই ঝেনহুয়া ডেটা ইনফরমেশন টেকনোলজি কোম্পানিটি কাজ করছে ২০১৮ সাল থেকে। দেশ-বিদেশে এদের ২০ টি অফিস রয়েছে।
Comments are closed.