কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের লাইনকে কেন ‘সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া’ লেখা হয়েছে, প্রশ্নের মুখে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
কংগ্রেস ইস্যুতে দলের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে আলোচনা, বিতর্ক চলছে সেই ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে থেকে। বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে তীব্র সমালোচনাও করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরই মধ্যে ফের একটা লোকসভা ভোটের ঘন্টা বাজতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সিপিএমের অন্দরের টানাপোড়েন বা বিতর্ক যেন থামারই নয়। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসতে চলেছে সিপিএমের দুদিনের রাজ্য কমিটির মিটিং। তার আগে এই বিতর্ক নতুন মাত্রা পেল রাজ্য পার্টি থেকে ইস্যু করা একটি পুস্তিকাকে কেন্দ্র করে। রাজ্য সম্মেলেনে গৃহীত রাজনৈতিক লাইনকে কেন ‘সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হয়েছে’ বলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট প্রকাশিত পুস্তিকায় দাবি করা হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের একটা অংশের মধ্যে।
ঘটনার সূত্রপাত, এ বছর মার্চের শুরুতে কলকাতার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে অনুষ্ঠিত সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে। গত তিন বছরে দলের বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কার্যকলাপ নিয়ে কাটাছেঁড়া হয় রাজ্য সম্মেলনে। এবং স্বাভাবিকভাবেই সিপিএমের ২০১৮ সালের রাজ্য সম্মেলনে বিতর্কের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ২০১৬ বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা। সম্মেলেনে উপস্থিত দলের একটা বড় অংশের সদস্য যেমন আসন সমঝোতাকে সমর্থন জানান, পাশাপাশি বেশ কয়েকজন তার বিরোধিতা করেন এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের তীব্র সমালোচনা করেন। কেন্দ্রীয় কমিটি এই আসন সমঝোতাকে ‘দলের রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’ বলে জানালেও, সূর্যকান্ত মিশ্র যে রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেছিলেন, সেখানে জোটকে বৈধতাই দেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনায় সরব হন বিভিন্ন জেলার একাধিক নেতা।
সম্মেলেনের শেষ দিন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জবাবি ভাষণ দেওয়ার পর তীব্র বিতর্ক বাধে গৃহীত রাজনৈতিক লাইন নিয়ে। প্রাক্তন সম্পাদক বিমান বসু মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন, যাঁরা গৃহীত লাইনের পক্ষে তাঁরা যেন হাত তোলেন। অধিকাংশ সদস্যই তাতে হাত তোলেন। কিন্তু কারা গৃহীত লাইনের বিপক্ষে তাঁর মতামত আর বিমান বসু জানতে চাননি। এতেই ক্ষুব্ধ হন বিরোধীরা। প্রথম প্রতিবাদ জানান কলকাতার নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী দেবেশ দাস। যাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করে রাজনৈতিক লাইনের বিরোধিতা এবং সমালোচনা করেছেন তাঁদের কেন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, এই দাবি তোলেন তিনি। দেবেশ দাস বলেন, ‘সম্মেলনে অনেকেই জোটের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের সংখ্যাটাও যাচাই করা হোক’। এর পরেই মুখ খোলেন কলকাতার সিটু নেতা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের জোট তত্ত্বকে খারিজ করেছে, তা সত্ত্বেও রাজ্য সম্মেলেনের প্রতিবেদনে তাকেই ঘুরিয়ে সমর্থন করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত অনুচিত এবং রাজ্য কমিটি যদি কেন্দ্রীয় কমিটিকে না মানে, তবে নিচুতলার কমিটিও ভবিষ্যতে রাজ্য কমিটিকে মানবে না’। দেবাঞ্জনবাবু বলা শুরু করা মাত্রই উত্তর ২৪ পরগনার শ্রমিক নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায় নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার শুরু করে দেন। তিনি বলেন, ‘জোট বিরোধীরা যদি সবাই বলতে শুরু করেন, তবে যাঁরা জোটের পক্ষে তাঁদেরও বলতে দিতে হবে’। এরপরেই সম্মেলনে শুরু হয়ে যায় চিৎকার-পালটা চিৎকার, তীব্র হট্টগোল। দু’পক্ষই গলা চড়ায়। কারো কথাই স্পষ্ট করে বোঝা যায়নি, কে কোন পক্ষে বলছেন। একাধিক জোট বিরোধী দাবি করেন, তাঁদের বক্তব্যও রাজনৈতিক দলিলে নথিভুক্ত করতে হবে। মঞ্চ থেকে পুরো ব্যাপারটা দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যান বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সীতারাম ইয়েচুরিরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিমান বসু মাইকে বলতে বাধ্য হন, যাঁরা রাজনৈতিক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তাঁরাও যেন হাত তোলেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং জোট বিরোধী একাধিক নেতা হাত তুলে রাজ্য সম্পাদকের পেশ করা রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রস্তাব এবং জবাবি ভাষণের বিরোধিতা করেন।
এই বিষয়ের এখানেই ইতি পড়তে পারত, কিন্তু পড়ল না। কারণ, সপ্তাহ দুয়েক আগে ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৫তম সম্মেলনের রিপোর্টিং নোট’ নামে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। রাজ্য সম্মেলনে যে রাজনৈতিক লাইন গৃহীত হয়েছে তা এই পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে এবং পাঠানো হয়েছে সমস্ত জেলায়।
ঘটনার সূত্রপাত, এ বছর মার্চের শুরুতে কলকাতার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে অনুষ্ঠিত সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে। গত তিন বছরে দলের বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কার্যকলাপ নিয়ে কাটাছেঁড়া হয় রাজ্য সম্মেলনে। এবং স্বাভাবিকভাবেই সিপিএমের ২০১৮ সালের রাজ্য সম্মেলনে বিতর্কের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ২০১৬ বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা। সম্মেলেনে উপস্থিত দলের একটা বড় অংশের সদস্য যেমন আসন সমঝোতাকে সমর্থন জানান, পাশাপাশি বেশ কয়েকজন তার বিরোধিতা করেন এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের তীব্র সমালোচনা করেন। কেন্দ্রীয় কমিটি এই আসন সমঝোতাকে ‘দলের রাজনৈতিক লাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’ বলে জানালেও, সূর্যকান্ত মিশ্র যে রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেছিলেন, সেখানে জোটকে বৈধতাই দেওয়া হয়েছে বলে সমালোচনায় সরব হন বিভিন্ন জেলার একাধিক নেতা।
সম্মেলেনের শেষ দিন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জবাবি ভাষণ দেওয়ার পর তীব্র বিতর্ক বাধে গৃহীত রাজনৈতিক লাইন নিয়ে। প্রাক্তন সম্পাদক বিমান বসু মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন, যাঁরা গৃহীত লাইনের পক্ষে তাঁরা যেন হাত তোলেন। অধিকাংশ সদস্যই তাতে হাত তোলেন। কিন্তু কারা গৃহীত লাইনের বিপক্ষে তাঁর মতামত আর বিমান বসু জানতে চাননি। এতেই ক্ষুব্ধ হন বিরোধীরা। প্রথম প্রতিবাদ জানান কলকাতার নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী দেবেশ দাস। যাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করে রাজনৈতিক লাইনের বিরোধিতা এবং সমালোচনা করেছেন তাঁদের কেন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, এই দাবি তোলেন তিনি। দেবেশ দাস বলেন, ‘সম্মেলনে অনেকেই জোটের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের সংখ্যাটাও যাচাই করা হোক’। এর পরেই মুখ খোলেন কলকাতার সিটু নেতা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের জোট তত্ত্বকে খারিজ করেছে, তা সত্ত্বেও রাজ্য সম্মেলেনের প্রতিবেদনে তাকেই ঘুরিয়ে সমর্থন করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত অনুচিত এবং রাজ্য কমিটি যদি কেন্দ্রীয় কমিটিকে না মানে, তবে নিচুতলার কমিটিও ভবিষ্যতে রাজ্য কমিটিকে মানবে না’। দেবাঞ্জনবাবু বলা শুরু করা মাত্রই উত্তর ২৪ পরগনার শ্রমিক নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায় নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার শুরু করে দেন। তিনি বলেন, ‘জোট বিরোধীরা যদি সবাই বলতে শুরু করেন, তবে যাঁরা জোটের পক্ষে তাঁদেরও বলতে দিতে হবে’। এরপরেই সম্মেলনে শুরু হয়ে যায় চিৎকার-পালটা চিৎকার, তীব্র হট্টগোল। দু’পক্ষই গলা চড়ায়। কারো কথাই স্পষ্ট করে বোঝা যায়নি, কে কোন পক্ষে বলছেন। একাধিক জোট বিরোধী দাবি করেন, তাঁদের বক্তব্যও রাজনৈতিক দলিলে নথিভুক্ত করতে হবে। মঞ্চ থেকে পুরো ব্যাপারটা দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যান বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সীতারাম ইয়েচুরিরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিমান বসু মাইকে বলতে বাধ্য হন, যাঁরা রাজনৈতিক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তাঁরাও যেন হাত তোলেন। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং জোট বিরোধী একাধিক নেতা হাত তুলে রাজ্য সম্পাদকের পেশ করা রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রস্তাব এবং জবাবি ভাষণের বিরোধিতা করেন।
এই বিষয়ের এখানেই ইতি পড়তে পারত, কিন্তু পড়ল না। কারণ, সপ্তাহ দুয়েক আগে ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৫তম সম্মেলনের রিপোর্টিং নোট’ নামে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। রাজ্য সম্মেলনে যে রাজনৈতিক লাইন গৃহীত হয়েছে তা এই পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে এবং পাঠানো হয়েছে সমস্ত জেলায়।
এই নোটের শুরুতেই লেখা হয়েছে, ‘আলোচনার শেষে সংশোধনী-সংযোজনীসহ সর্বসম্মতিক্রমে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন সম্মেলনে গৃহীত হয়’। এবং এই বাক্যটিকে নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। জোট বিরোধী একাধিক নেতা এখন দাবি তুলছেন, সম্মেলনেই যেখানে রাজনৈতিক লাইনের বিরোধিতা করেন একাধিক সদস্য, সেখানে সেটিকে ‘সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত’ কেন বলা হবে? কেন লেখা হবে না, অনেকেই এর বিরোধিতা করেন, অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে তা গৃহীত হয়েছে? তাঁদের বক্তব্য, জোট বিরোধীদের কোনও সংশোধনীই গৃহীত হয়নি। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক লাইনকে ‘সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত’ লেখা চূড়ান্ত অনৈতিক কাজ।
Related Posts
সিপিএমে কমিটিগুলিতে কোনও বিষয়ে আলোচনা করে বিতর্ক এবং বিরোধিতার মধ্যে দিয়ে তা গৃহীত হলেও, সেটিকে ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ লেখার রেওয়াজ বহু দিনের। বিতর্কে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে কেন ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ লেখা হবে তা নিয়ে আগেও দলে অনেক বিতর্ক হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিরুদ্ধ মতকে কোনওভাবেই স্বীকৃতি দিতে চান না বলে আগেও নানা ইস্যুতে অভিযোগ করেছেন একাধিক নেতা। তাঁদের অভিযোগ, আলিমুদ্দিন কোনও বিরুদ্ধ মতকে গুরুত্ব দিতে চায় না বলেই কমিটিগুলিতে ভোটাভুটিরও বিরোধিতা করে। এবারও কলকাতা জেলা সম্মেলনে সম্পাদক নির্বাচন এড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। শেষমেশ আলিমুদ্দিনের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সেখানে মাঝরাতে ভোট হয় এবং তাতে আলিমুদ্দিনের প্রার্থী মানব মুখার্জিকে হারিয়ে সম্পাদক নির্বাচিত হন কল্লোল মজুমদার। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়টিকেও আলিমুদ্দিন ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ আখ্যা দিয়ে যেভাবে দলে চাপিয়ে দিতে চাইছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে লোকসভা ভোটের আগে এই বিষয় নিয়ে ফের একটা বিতর্কের মুখে সূর্যকান্ত মিশ্রর নেতৃত্বে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।