সম্প্রতি একটি ইমেল মারফত কর্মীদের বেতন কমানোর কথা ঘোষণা করেছেন ইন্ডিগোর সিইও রণজয় দত্ত। তিনি জানান, নিজে ২৫ শতাংশ কম বেতন নেবেন। সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সমমর্যাদার অফিসারদের ২০ শতাংশ বেতন কমানো হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পাইলটদের বেতন কমছে ১৫ শতাংশ করে এবং তার নীচের বিমানকর্মীদের বেতন ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ঘোষণার ক’দিন আগেই ইন্ডিগো উড়ান পরিচালনার প্রধান অসীম মিত্র ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, আগামী দিনে কিছু কড়া সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন তাঁরা। আর তারপরেই কর্মীদের বেতনে কোপ পড়ল। এই বেতন কাটার ব্যাপারে রণজয় দত্ত বলেন, সংস্থাকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের প্রত্যেকের কিছু ‘ আত্মত্যাগ জরুরি’। প্রসঙ্গত, গত আর্থিক বছরে ইন্ডিগোর কর্মীদের বেতন খাতে খরচ হয়েছে ৩,২১০ কোটি টাকা। যা সংস্থার মোট খরচের মাত্র ১১ শতাংশ।
এদিকে ওয়াদিয়া গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত গো এয়ার লিমিটেডের আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই সঙ্গে সংস্থার একটি বড় অংশের কর্মীকে পারিশ্রমিক ছাড়াই ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, গো এয়ার স্বল্প সময়ের জন্য এবং সাময়িকভাবে পর্যায়ক্রমে কর্মীদের ছুটিতে পাঠাচ্ছে। এই বিপুল সংখ্যক কর্মীকে হঠাৎ করে ছুটিতে পাঠানো এবং তাদের বিনা পারিশ্রমিকেই এক মাসের বেশি বাড়িতে থাকতে বলার ঘোষণায় ক্ষোভ ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে কর্মীদের মধ্যে।
মুম্বই থেকে পরিচালিত গো এয়ারের দাবি, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের আশঙ্কায় এবং নিরাপত্তার খাতিরে এই পরিষেবা বন্ধ রাখা হল। কিন্তু তার ফলে কর্মীরা যে বিপাকে পড়লেন তার দায় নিতে রাজি নয় গো এয়ার। গো এয়ারের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলি মালদ্বীপ, আবু ধাবি, দুবাই, দাম্মাম, কুয়েত, ফুকেট, ব্যাঙ্কক ইত্যাদি দেশে যায়। অতিমারি করোনাভাইরাস প্রভাবিত ওই দেশগুলিতে মঙ্গলবার থেকে গো এয়ার সংস্থা পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে।
শুধু গো এয়ার নয়, ইন্ডিগো সহ প্রায় সব বিমান সংস্থা ইউরোপ, আমেরিকা সহ করোনা প্রভাবিত বিভিন্ন দেশে তাদের উড়ান পরিষেবা বন্ধ রাখছে। শনিবার মাঝরাত থেকে ভারতে আন্তর্জাতিক বিমানের নামা-ওঠা বন্ধ। সূত্রের খবর, অন্য অনেক দেশও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সব বিমান সংস্থার কর্মীদের ভবিষ্যৎ কী, কেউ জানে না।
এয়ার ইন্ডিয়ার ঘোষণা, পাইলটদের বিনোদন অ্যালাওয়েন্স কমাচ্ছে তারা। এছাড়া কেবিন ক্রু দের ফ্লাইং অ্যালাওয়েন্সসে কোপ পড়ছে। শতাধিক পাইলট ও কর্মীকে যে চুক্তির ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের উপরও খাঁড়া ঝুলছে। কর্মীদের ইনক্রিমেন্ট, বেতন এমনকী নতুন করে কর্মী নিয়োগ মুলতবি রাখছে বিমান সংস্থাগুলি। এয়ার এশিয়ার সিইও সুনীল ভাস্করণ জানান, বিমানের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনাও স্থগিত রাখা হয়েছে। ভিস্তারা, স্পাইসজেটও কর্মীদের বেতন কাটছাঁটের দিকে হাঁটছে বলে খবর। পাশাপাশি ২১ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে স্পাইসজেট।
এদিকে বিপুল সংখ্যক কর্মী, ক্রু, বিমানসেবিকা, বিমানবন্দরে কাজ করা বড় থেকে ছোট কর্মীরা কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় ভীত। বিমান সংস্থা থেকে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ তাঁদের মাস্ক, গ্লাভস সরবরাহ ও ব্যবহারের কথা ঘোষণা করলেও কর্মীদের অভিযোগ, এই মারণ রোগ মোকাবিলা করে তাঁরা কীভাবে কাজ করবেন তার কোনও প্রশিক্ষণ পাননি। তাছাড়া এয়ারপোর্ট গুলিতে যেহেতু করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা সবথেকে বেশি, সেখানে দিনের পরদিন আতঙ্ক নিয়ে কাজ করাও বড় সমস্যার। তার উপর একের পর এক উড়ান পরিষেবা বাতিল হওয়া, ছুটিতে পাঠানো, বেতন নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় প্রবল উদ্বেগের মধ্যে বিমান কর্মীরা। চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন অনেকে।
Comments are closed.