করোনাভাইরাস ঠেকাতে কী করণীয়, কী নয়, তা নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যে কোন পরিবেশে করোনাভাইরাস দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করছেন গবেষকরা। উষ্ণতম স্থানে কি করোনা কম ছড়াতে পারে? ভারত কতটা নিরাপদ? বৃহস্পতিবার আলজাজিরা নিউজ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সূর্যের আলো এবং তাপ ভাইরাসের বৃদ্ধি ও আয়ু কমিয়ে দিতে পারে বটে। তবে করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অধিক জরুরি।
বুধবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লক্ষ এবং মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের। চিনে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ইউরোপ, আমেরিকায় নতুন করে করোনার হানা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বসন্তের আগমন ও গ্রীষ্মের প্রভাবে ধীরে ধীরে কমতে পারে করোনার সংক্রমণ। ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজি বিশেষজ্ঞ ডাঃ স্টিফান বারাল বলেন, আশা করছি, আমেরিকায় গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক কারণেই করোনার দাপট কমে যাবে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথোলজির প্রফেসর ডাঃ জন নিকোলসকে উদ্ধৃত করে আমেরিকার আবহাওয়া দফতর অ্যাকুওয়েদার বলছে, মোট তিনটি জিনিস করোনাভাইরাস সহ্য করতে পারে না, সূর্যের আলো, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা। সূর্যের আলো করোনাভাইরাসের বৃদ্ধিকে অর্ধেক করে দেয়, ভাইরাসের বাকি অর্ধেক জীবনের মেয়াদ হবে আড়াই মিনিট। কিন্তু অন্ধকারের মধ্যে করোনার আয়ু ১৩ থেকে ২০ মিনিট।
জার্মানির সেন্টার ফর এক্সপেরিমেন্টাল অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইনফেকশন রিসার্চের এক ভাইরোলজিস্ট-ও বলছেন কোভিড-১৯ ভাইরাস একেবারেই তাপ সহ্য করতে পারে না। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই এই ভাইরাসের কার্যকাল শেষ হয়ে যায়।
করোনাভাইরাসে বিপজ্জনক ভাবে আক্রান্ত আমেরিকার আবহাওয়া দফতর অ্যাকুওয়েদার বলছে, আগামী ১৯ মার্চ থেকে বসন্ত চলে আসবে দেশে। ইতালির আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ২০ মার্চের মধ্যে বসন্ত আসবে ইউরোপে। ইরানেও ২০ মার্চ থেকে শুরু হবে বসন্ত। দক্ষিণ গোলার্ধের কাছাকাছি দেশগুলির দিনের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে যাবে বসন্তের সময়। বসন্তে জাকার্তায় দিনের তাপমাত্রা থাকে মোটামুটি ৩০ ডিগ্রি, কুয়ালা লামপুরে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মালয়েশিয়াতেও ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ঘোরাফেরা করে দিনের তাপমাত্রা।
তবে শুধু দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলেই এই ভাইরাসের হানা কমে যাবে, এমনটা মোটেই বলছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জোর দিচ্ছেন, করোনা আক্রান্ত দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর। সেই দেশের মানুষের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধির উপর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিউম্যান করোনাভাইরাস ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে একটি টেফলন, সিরামিক অথবা স্টিলের পাত্রে। একদল বিশেষজ্ঞের আবার দাবি, উষ্ণতম দেশে করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ, এই তত্ত্ব একটা ‘মিথ’ ছাড়া আর কিছুই নয়। সূর্যের আলোয় বাইরে থাকা ভাইরাস অবশ্যই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আক্রান্তের হাঁচি বা কাশির মধ্যে যে ড্রপলেট ছড়াচ্ছে তা অপরজনকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও ঠিকঠাক সুরক্ষা বিধি মেনে চলা ভীষণ জরুরি। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মাইকেল চি ওয়াই চান বলছেন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্সের মতো দেশগুলিতে তাপমাত্রা বেশির কারণেই ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা খানিকটা কম। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু এড়াতে নির্দিষ্ট বিধি-নিষেধ মানা জরুরি। চেন্নাইয়ের ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আব্দুল গফুরও একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারতের জনসংখ্যার নিরিখে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। এর একটা বড় কারণ হল তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা। কিন্তু এই মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা কম হলে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মন্দ হলে প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকছেই।
Comments are closed.