গোটা বিশ্বে মূর্তিমান আতঙ্কের অপর নাম এখন করোনাভাইরাস (coronavirus)। চিনের একটি প্রদেশে প্রথম ধরা পড়ার পর এখন যা চিনের গণ্ডি ছাড়িয়ে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপ-আমেরিকা, মধ্য প্রাচ্যে। ভারতে করোনাভাইরাসের থাবা এড়াতে শুরু হয়ে গিয়েছে যুদ্ধসাজ। বিমান বন্দরগুলোতে প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সরকারি হাসপাতাগুলোতে খোলা হচ্ছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। এখনও পর্যন্ত নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ভারতীয়ের সন্ধান না পাওয়া গেলেও আগামী দিনে কী হবে তা অজানা।
কিন্তু জানেন কি ঠিক কোন উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে নোভেল করোনাভাইরাসে (coronavirus) আক্রান্ত বলা হবে? আর এখানেই বেধেছে মস্ত বড় গোল। চিনের সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সে দেশে মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে নোভেল করোনাভাইরাসের থাবায়। মৃতদের রোগের উপসর্গ এবং বয়স শ্রেণি নিয়ে তুল্যমূল্য বিচারে সামনে এসেছে একের পর এক এমন তথ্য, যা চিরাচরিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতিকে এ যাবৎ সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
করোনাভাইরাসে মৃতদের উপসর্গ কী ছিল?
চিনে এমন অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের সামান্য জ্বরের মতোও কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। ফলে করোনাভাইরাসের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রুখতে ঠিক কোন প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন প্রকাশিত তথ্য বলছে, ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যে ১৭ জন মানুষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, সর্দি। চিনে ৮৯ বছরের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে। সে দেশের সরকারি হিসেবে এই দু’জনই সবচেয়ে বয়স্ক। তাঁদের মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ ছিল ঝিমুনি এবং জ্বর। তাঁরা দু’জনই ৫ জানুয়ারি চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন এবং ১৮ জানুয়ারি দু’জনেরই মৃত্যু হয়। মেডিক্যাল রিপোর্ট জানাচ্ছে মৃত দু’জনেই উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন।
উপসর্গ চেনাবে জ্বর?
এখানেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ভাইরোলজিস্টরা। কারণ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে জ্বরের উপসর্গ নেই। বরং পুরনো কোনও শারীরিক সমস্যার কারণেই মৃত্যু হচ্ছে রোগীর।
অর্থাৎ ভারতের কোনও বিমানবন্দরে করোনোভাইরাস (coronavirus) সংক্রামিত কোনও ব্যক্তি নামলেও গায়ে জ্বরের উপসর্গ না থাকলে এবং দৃশ্যত সুস্থ থাকলে, তার রোগ সম্পর্কে বোঝার কোনও উপায় এখনও পর্যন্ত নেই। যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোরাল করে তুলেছে।
জ্বর ছাড়াই যদি এই করোনাভাইরাস (coronavirus) ছড়িয়ে পড়তে থাকে তাহলে তাকে শনাক্ত করা আরও শক্ত হয়ে উঠবে। এই সুযোগে তা বিশ্বের কোণে কোণে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মন্তব্য ওয়াশিংটন ডিসির সেন্টার ফর ডিজিস ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসির ডিরেক্টর রামানান লক্ষীনারায়ণের।
কোন বয়সীদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৃতদের মধ্যে অন্তত ৯ জনের আগে থেকেই ডায়বেটিস, করোনারি ধমনীর অসুখ কিংবা পারকিনসনস রোগ ছিল। মৃতদের মধ্যে ৮ জনের বয়স ৮০ কিংবা তার উপর। ২ জন সত্তরোর্ধ। ৫ জনের বয়স ষাট কিংবা তার উপর এবং একজন পঞ্চাশোর্ধের মৃত্যু হয়েছে।
মহিলা না পুরুষ, কারা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি?
সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে ৪৮ বছরের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁর আগে থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ছিল। মৃতদের মধ্যে ৪ জন মহিলা, বাকি ১৩ জনই পুরুষ।
তাহলে কি ধরে নেওয়া হবে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের করোনাভাইরাসে (coronavirus) আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি? ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের দাবি, সেটা বলার মতো জায়গায় আসেনি মেডিক্যাল সায়েন্স। এই করোনাভাইরাসের উপসর্গ চিহ্নিত করা গেলে সে সম্বন্ধে বলা সম্ভব হবে। তবে প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাস পুরুষ-মহিলা সবার ক্ষেত্রেই মারণ আকার নিয়েছে, তা বলাই যায়।
করোনাভাইরাস কোন বয়সীদের উপর আক্রমণ করছে?
চিনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের গড় বয়স ৭৩ বছর। সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ৪৮ বছরের প্রৌঢ়ার এবং সবচেয়ে বেশি বয়সী হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ৮৯ বছর বয়সী দু’জনের। এই হিসেব থেকে বলা যেতেই পারে মূলত এই বয়স শ্রেণির মানুষদের নিয়েই আশঙ্কা বেশি। কিন্তু শিশু বা কম বয়সী তরুণ-তরুণীরাও যে এই করোনাভাইরাসের (coronavirus) থাবা এড়িয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন তাও এখনও সঠিক প্রমাণ হয়নি। ফলে বয়স, লিঙ্গ নির্বিশেষে চরম পর্যায়ের সতর্কতা অবলম্বনই এখন একমাত্র উপায়।
Comments are closed.