দীপঙ্কর ভট্টাচার্য: বাংলার বাম নেতাদের তৃণমূল-বিজেপিকে এক গোত্রে ফেলার প্রবণতা ভুল! প্রধান শত্রু বিজেপি
বিহারে সরকার গড়তে না পারলেও মহাজোটের অংশ হিসেবে বামেরা নতুন করে নিজেদের জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। বিহারে ২৯ আসনে লড়ে সিপিআইএমএল লিবারেশন, সিপিআই ও সিপিএম জয় পেয়েছে ১৬ আসনে।
এদিকে বিহারে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া সত্ত্বেও যেভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হল বিজেপি-নীতীশ জোট, তাতে বাংলা দখলের লক্ষ্যে দ্বিগুণ উৎসাহে ঝাঁপাবে গেরুয়া শিবির। বিহার নির্বাচনের রেজাল্ট এবং বাংলায় তার প্রভাব নিয়ে TheBengalStory র সঙ্গে কথা বললেন বিহারে নজরকাড়া সাফল্য পাওয়া সিপিআইএমএল লিবারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।
প্রশ্ন: বিহারে মহাজোট আরও গোটা কুড়ি আসন পেলে ফল অন্যরকম হোত? কংগ্রেসকে ৭০ আসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য: প্রাথমিকভাবে তাই মনে হচ্ছে। ৩ বামদলকে আরও ২০ আসন দিলে আরও ভালো ফল হতে পারত। বিহারে কংগ্রেসের সংগঠনের যা অবস্থা তাতে ৩৫-৪০ টা সিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ভালো হোত। যাই হোক এখন এটা নিয়ে কথা বলার অবকাশ নেই।
প্রশ্ন: বিহার শেষ, এবার বাংলা। বিজেপি যেমন দ্বিগুণ উৎসাহে বাংলা দখলে নামছে, তেমনই উজ্জীবিত বামেরাও আছে। বিজেপিকে রুখতে কী পরিকল্পনা?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য: একটা ব্যাপার শুরুতেই স্পষ্ট করে দিচ্ছি, এই মুহূর্তে গণতন্ত্রের প্রধান শত্রুর নাম বিজেপি। বাংলা সহ গোটা দেশে এই ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলা করতে হবে। আর তা করতে বামপন্থীদের ফিরে যেতে হবে মাটির কাছাকাছি। সংগঠনকে আরও পোক্ত করতে হবে। আসল কথা হল বামপন্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। পুরনো ধারাবাহিকতার জোরে বিজেপিকে ঠেকানো যাবে না। নতুন ধারায় আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নতুন নতুন মুখ তুলে আনতে হবে। বিহারেও আমরা এটাই করেছি।
প্রশ্ন: বিজেপিকে ঠেকাতে বাংলায় কি তৃণমূলের নেতৃত্বে মহাজোট?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য: এখনই সেকথা বলছি না। কিন্তু বাংলার বাম নেতাদের মধ্যে তৃণমূল ও বিজেপিকে একই গোত্রে ফেলার প্রবণতা আছে। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বলুন তো তৃণমূল ও বিজেপিকে একই বন্ধনীতে ফেলা যায়? দেওয়াল লিখন কি পড়তে পারছেন না বাংলার বিজেপি বিরোধী শক্তিরা? আমি বাংলার বাম নেতাদের উদ্দেশে বলতে চাই, তৃণমূলকে বিজেপির সঙ্গে একাসনে রেখে আক্রমণের পরিবর্তে বিজেপি বিরোধিতায় তৃণমূলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন।
প্রশ্ন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বিজেপিকে ঠেকাতে একের বিরুদ্ধে একের সওয়াল করছেন। আপনি কী মনে করেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য: আমাদের নতুন আলোয় বিবেচনা করতে হবে। অনেক বিষয়েই আমরা নীতিগতভাবে তৃণমূলের বিরোধী। কিন্তু বিজেপিকে ঠেকানো যখন প্রধান কাজ, তখন মমতা কবে বিজেপির সঙ্গে জোট করেছিলেন তাই তাঁর সঙ্গে কোনও কথা নেই, এটা বললে মানুষ মেনে নেবেন না। কারণ মমতা কবে বিজেপির জোটে ছিলেন তা নিয়ে মানুষ আর চিন্তিত নয়। মানুষ দেখছেন এই মুহূর্তে বিজেপির রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়ছেন কারা। মানুষ অতীতে বাঁচে না। মানুষ ভবিষ্যতের স্বপ্নে বর্তমানে বাঁচে। এটা ভুলে গেলে চলবে না।
প্রশ্ন: আপনার কথায় বাংলায় মহাজোটের ইঙ্গিত পাচ্ছি। তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলবেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য: এখনই সেটা বলা বাড়াবাড়ি হবে। আমাদের প্রধান কাজ বাংলায় সংগঠন মজবুত করা। ভোটের আগে পরিস্থিতি বিবেচনা করবে সব পক্ষই। তখন দেখা যাবে। আসল কথা হল, ভোট কাটাকাটির ফায়দা যেন বিজেপি না পায়। তার জন্য যা যা করার করবেন নিশ্চয়ই বাংলার বামপন্থী নেতৃত্ব।
Comments are closed.