শনিবার, দিল্লির ভোটের দিনও শাহিন বাগে অব্যাহত রইল নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান আন্দোলন। শাহিন পাবলিক স্কুলে যখন ভোটের লম্বা লাইন, তখন শাহিন বাগের ধর্নাস্থলে বসে রয়েছেন বহু মহিলা। ঘন ঘন উঠছে স্লোগান। কেউ ধর্নাস্থল থেকে উঠে ভোট দিয়ে এসে ফের বসে পড়ছেন। কেউ আবার সকাল সকাল ভোট দিয়ে চলে এসেছেন শাহিন বাগের অবস্থানে সামিল হতে।
এ বার দিল্লির ভোটের মূল ইস্যুই যেন হয়ে উঠেছে শাহিন বাগের আন্দোলন। বিজেপির অভিযোগ ছিল, এখান থেকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপ এবং কংগ্রেস মুসলমানদের খেপিয়ে তুলছে। বিজেপি চাইছিল, ভোটের আগেই এই আন্দোলন জোর করে তুলে দিতে। এর জন্য তারা সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়। দিল্লির প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক নন্দকিশোর গর্গ সড়ক অবরোধের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, ভোটের আগের দিন, শুক্রবারই আদালত এ ব্যাপারে রায় দিক। কিন্তু আদালত জানিয়ে দেয়, ভোট মিটলে সোমবার এই মামলার শুনানি হবে। সেদিনই শুনানির জন্য মামলাকারীর আইনজীবী পীড়াপীড়ি করলে বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কল বলেন, এই তো, ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে। বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, তাঁরা ভোটের উপর প্রভাব ফেলতে চান না।
এদিকে শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দিল্লিতে ভোট পড়ে ৫২.৯৫ শতাংশ, যা গতবারের তুলনায় বেশ কম। গতবার ভোট পড়েছিল ৬৭.১২ শতাংশ। ভোট মিটে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে শুরু হবে এক্সিট পোল। সমস্ত প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষাই জানিয়েছে, সরকার গড়ার ক্ষেত্রে এ বারও অনেক এগিয়ে আপ। দ্বিতীয় স্থানে তারা রেখেছে বিজেপিকে এবং শেষে রাখা হয়েছে কংগ্রেসকে। তার মধ্যেই এদিন বিকেলে বিজেপির সাংসদ প্রবেশ সিং দাবি করেন, অন্তত ৫০ টি আসন পেয়ে তারা দিল্লিতে সরকার গঠন করবে। কারা সরকার গড়বে, তা ১১ ফেব্রুয়ারি সকালের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। ওই দিন গণনা।
দিল্লি বিধানসভার এই ভোট প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তাঁর সভাপতিত্বে গত এক বছরে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা ভোটে হেরেছে বিজেপি। দিল্লির ভোট ঘোষণার কয়েক দিন আগে তিনি সভাপতিত্ব ছেড়েছেন। নতুন সভাপতি হয়েছেন জে পি নাড্ডা। এ বার দিল্লি দখল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। গত এক মাস ধরে বিজেপি নেতারা দিল্লির ভোট নিয়ে পড়ে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির তাবড় নেতা-মন্ত্রীরা দিল্লিতে প্রচার চালিয়েছেন সরাসরি মেরুকরণের ধুয়ো তুলে। বাইরে থেকে শ’য়ে শ’য়ে কর্মী নিয়ে আসা হয়েছে দিল্লিতে। তার মধ্যেই চলছে নাগরিকত্ব বিরোধী আন্দোলন, যার কেন্দ্রে রয়েছে দিল্লিরই শাহিন বাগ। বস্তুত, তাকে ঘিরেই প্রচারে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। আপ সেখানে উন্নয়নকেই প্রধান হাতিয়ার করেছে। কংগ্রেস মোটামুটি হাল ছেড়ে দিয়েই দায়সারা গোছের প্রচার চালায়। ফের যদি দ্বিতীয়বারের জন্য দিল্লির সিংহাসনে বসে আপ, সেটা বিজেপির পক্ষে বড় ধাক্কা হবে। প্রমাণ হবে, নরেন্দ্র মোদীর ক্যারিশ্মা কিছুটা হলেও কমছে।
দিল্লিতে ভোট দিলেন নেতা থেকে অভিনেতা,
Comments are closed.