দৃষ্টান্ত! সংক্রমিতদের বাড়ি বাড়ি রান্না করা খাওয়ার যোগাচ্ছেন বারাসাতের প্রচারবিমুখ দিদিমণি
দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জটা নিলেন ৫২ বছরের শিক্ষিকা
পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। পড়ুয়াদের জীবনে তাঁর গুরুদায়িত্ব। কিন্তু পেশা ছাড়াও তিনি একজন নাগরিক। তাই দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জটা নিলেন ৫২ বছরের শিক্ষিকা।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশে। এই মুহূর্তে মানুষের পাশে থাকতে চেয়েই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি। হঠাৎ করেই মাথায় পোকা নড়ে বসল। বুধবার সিদ্ধান্ত নেন বিনামূল্যে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি এবং তাঁর পরিবারকে খাবার সরবরাহ করবেন। বৃহস্পতিবার অর্ডার নিয়ে শুক্রবার থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন। প্রথমদিন ১১ জনকে খাওয়ালেন। TheBengalStory কে জানালেন, একটা পরিবারে সকলেই আক্রান্ত। তখন তাঁদের কে সাহায্য করবে? অনেকেই ভয় পাচ্ছেন এগিয়ে আসতে। সেই জায়গা থেকে যদি কিছু একটু করতে পারি! অন্তত ভাত-ডাল টুকু যদি করে দিতে পারি, তাই।
দরিদ্র থেকে ধনী সবার পাশেই স্বার্থহীন হয়ে দাঁড়াতে চান তিনি। তাই নিজে রোজ যা খাই। সেই চাল, সেই ডাল দিয়েই রান্না করা হবে। বাড়িতে ৫ টা ডিম রান্না হলে আরও ৫ টা ডিম রাঁধব, জানালেন বারাসাতের স্কুল শিক্ষিকা।
আপাতত বারাসাত এবং হৃদয়পুর সংলগ্ন এলাকায় এই পরিষেবা মিলবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। পেশায় শিক্ষিকা হলেও এতগুলো মানুষের খাদ্য যোগানে অর্থের অভাব একটা থেকেই যায়। কিন্তু মনুষ্যত্ব যে অর্থের থেকেও দামী। তাই আগু-পিছু না ভেবে যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পড়েছেন তিনি। দিদিমণির উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে অর্থ সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। ছাত্র-ছাত্রী থেকে পরিবারের সদস্য, সবাই দিদিমণির পাশে।
কিন্তু শর্ত একটাই, নিজের নাম বা ছবি যেন প্রকাশ না পায়। কিন্তু কেন? দিদিমণি জানালেন, নাম-ধাম বেশি প্রচার পেলে আসল উদ্দেশ্য নষ্ট হতে পারে। আমার নাম ছড়িয়ে দেওয়া তো আমার উদ্দেশ্য নয়!
সংসারে তিনটি মানুষ। করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে পাশে পেয়েছেন স্বামী আর মেয়ের সমর্থন, জানালেন স্কুল শিক্ষিকা। নিজের স্বাস্থ্য এবং অপরের সুরক্ষার কথা মাথা রেখে রান্না ও ডেলিভারির ব্যপারটা কোভিড বিধি মেনেই করবেন বলে জানালেন। মনে ভয় থাকলেও ভয়কে জয় করার বিষয়ে ১০০ শতাংশ আশাবাদী।
নিজে বনগাঁ এলাকায় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির জেরে বন্ধ স্কুল। তাই অতিমারির সময় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেরি করলেন না দিদিমণি।
প্রবাদ আছে, বিপদে মানুষ চেনা যায়। অতিমারির কলকাতায় এরকম মানুষের সংখ্যা কম নয় যাঁরা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তেমন মানুষদেরই তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমরা। আপনি চেনেন এমন কাউকে? জানান আমাদের।
Comments are closed.