তালিবানরা বোনকে হত্যা করেছে, প্রেসিডেন্ট পালালেও মাটি কামড়ে লড়াই জারি রেখেছেন; চিনুন উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লাহ সালেহকে
আমরুল্লাহ সালেহ। তালিবানদের কাবুল দখলের পর হঠাৎই নামটি বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমের শিরনামে উঠে এসেছে। সম্প্রতি নিজেকে তিনি আফগানিস্তানের কেয়ারটেকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
Clarity: As per d constitution of Afg, in absence, escape, resignation or death of the President the FVP becomes the caretaker President. I am currently inside my country & am the legitimate care taker President. Am reaching out to all leaders to secure their support & consensus.
— Amrullah Saleh (@AmrullahSaleh2) August 17, 2021
যেখানে, তালিবান আতঙ্কে কাবুল ছেড়ে পালিয়েছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। কয়েকজন পরিষদ সহ ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়ে প্লেনে উঠেছেন তিনি। পাশাপাশি এখন সমগ্র বিশ্ববাসী আফগানবাসীর দেশ ত্যাগের হারহিম করা দৃশ্য দেখেছে। এই পরিস্থিতি তালিবানকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে দেশের মাটি কামড়ে লড়াই জারি রেখেছেন আফগান উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লা সালেহ।
তালিবানরা কাবুল দখল করার পর আত্মগোপন করেন সালেহ। জানা যাচ্ছে, বর্তমানে তিনি পাঞ্জশির প্রদেশে গা ঢাকা দিয়েছেন। তালিবানরা গোটা আফগানিস্তান দখল করলেও সালেহ’র দাপটে এখনও উত্তর পূর্বের পাঞ্জশির প্রদেশ কব্জা করতে পারেনি। সেখান থেকেই একের পর এক ট্যুইট করছেন তিনি। ট্যুইটে হুঙ্কার দিয়েছেন, তালিবানদের সঙ্গে এক ছাদের তলায় তিনি থাকবেন না। তালিবানকে দেশ থেকে উৎখাত করতে তিনি যে লড়াই চালিয়ে যাবেন তাও জানিয়ে দিয়েছেন।
কট্টর তালিবান বিরোধী হিসেবে পরিচিত আমরুল্লাহ সালহের জন্ম ১৯৭২ সালে ১৫ অক্টোবর আফগানিস্তানের পাঞ্জশিতে।
১৯৯৯ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার মদদপুষ্ট আফগান বাহিনীর বদলে আহমেদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বাধীন মুজাহিদ্দিন বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। পাকিস্তানে তাঁর মিলিটারি ট্রেনিং হয়।
১৯৯০ সালেই সালেহ নর্থান অ্যালায়েন্স-এর একজন সদস্য হন এবং তালিবান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। ১৯৯৭ সালে সালেহকে নর্থান অ্যালায়েন্স-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন মাসুদ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সালেহ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার সংগঠন এবং ইন্টালিজেন্স দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেন।
লাদেনের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আক্রমণের পরে আমেরিকা ও সালহের নেতৃত্বে নর্থান অ্যালায়েন্স বা ইউনাইটেড ফ্রন্ট মিলিত ভাবে তালিবান দমনে অভিযান শুরু করে।
২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই-এর আমলে আফগানিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ন্যাশনাল ডিরেক্টরেট অব সিকিউরিটি বা NDS এর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।
NDS এর প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পরেই সালেহ তালিবান এবং আলকায়দার নেতা বিন লাদেনের খোঁজে পাকিস্তানে তাঁর এজেন্টদের পাঠান। ২০০৬ সালে তিনি তথ্য প্রমাণ সমেত পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশাররফকে একটি রিপোর্ট দিয়ে জানান, লাদেন পাকিস্তান থেকে কুড়ি মাইল দূরে আ্যবোটাবাদে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। যদিও পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি সে রিপোর্ট মানতে চাননি। উল্লেখ্য ২০১১ সালে আ্যবোটাবাদ শহরেই মার্কিন বাহিনীর অভিযানে লাদেনের মৃত্যু হয়।
২০১৭ সালে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির মন্ত্রী সভায় সদস্য হন এবং সব শেষে ২০১৯ সালের দেশের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন আমরুল্লাহ সালেহ।
সম্প্রতি সালহের খোঁজে মরিয়া তালিবান বাহিনী তাঁর বোনকে নির্মম ভাবে হত্যা করে।
একটি ট্যুইট বার্তায় দেশবাসীকে আশ্বাস দিয়ে সালেহ জানিয়েছেন, লক্ষ লক্ষ দেশবাসী আমার কথা শুনেছেন, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আমি তাঁদের হতাশ করবো না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তান দখল করলেও সালেহের অস্তিত্ব তালিবানদের কাছে যথেষ্ট উদ্বেগের।
Comments are closed.