স্বামীকে হারিয়ে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ভালোবাসার লড়াই আইআইএম জোকার প্রাক্তনীর, হাজার ক্যান্সার আক্রান্তকে দিচ্ছেন বাঁচার উদ্যম

ক্যান্সার। একটি মাত্র শব্দের মধ্যেই বাস করে প্রচণ্ড ভয় আর অজানা আতঙ্ক। শরীরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে জানলে রোগী তো বটেই, তাঁর পরিবারও ভেঙে পড়ে। ক্যান্সারের বিষ ছড়াতে যত না সময় লাগে, তারও আগে রোগী ও তাঁর পরিবারকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয় কর্কট রোগ। কিন্তু ক্যান্সারের চিকিৎসায় ওষুধের মতোই সমান জরুরি রোগীর পাশে থাকা। প্রতিনিয়ত তাঁকে সাহস যোগানো। শুধুমাত্র মনের জোরেই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পড়া কোনও ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের আয়ু বেড়ে যেতে পারে। এই ভাবনা থেকেই ২০১৮ সালে ‘লাভ হিলস ক্যানসার’ (এলএইচসি) সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেন ডিম্পল পারমার। আইআইএম জোকার প্রাক্তনীর প্রতিষ্ঠা করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কেবল ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য অর্থ সাহায্যই করে না, আক্রান্তকে বিজ্ঞানসম্মত থেরাপি দেওয়া থেকে শুরু করে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের মানসিক শক্তি বৃদ্ধির কাজ করে ডিম্পল পারমারের সংস্থা। এখন ১ হাজারের বেশি ক্যান্সার আক্রান্তকে নতুন করে বাঁচার সাহস জোগাচ্ছেন ডিম্পল পারমার।
২০১৬ সালে কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টে (আইআইএম) এমবিএ করতে গিয়ে পরিচয় হয় মুম্বইয়ের বাসিন্দা ডিম্পল পারমার ও নীতীশ প্রজাপতের। এমবিএয়ের দ্বিতীয় বর্ষে এসে গাঢ় হয় দু’জনের বন্ধুত্ব। হঠাৎই ছন্দপতন। নিছক রুটিন চেক-আপ করাতে গিয়ে একদিন নীতীশ জানতে পারেন, তিনি কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত। তাও আবার থার্ড স্টেজ। আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়। চিকিৎসার জন্য তড়িঘড়ি মুম্বই ফিরে যান। ডিম্পলের কথায়, এমন প্রাণচঞ্চল ২৫ বছরের এক যুবক ক্যানসারের মতো অসুখে ভুগছেন তা বিশ্বাসই করতে পারেননি। কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছিলেন দু’জনেই। নীতীশের জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর হাতটা শক্ত করে ধরেন ডিম্পল। প্রতিজ্ঞা করেন মারণ অসুখের বিরুদ্ধে এই লড়াই তাঁদের দু’জনেরই। মুম্বইয়ে চিকিৎসার কয়েকমাসের মধ্যে কলকাতায় ফিরে আসেন নীতীশ। তারপর থেকে নীতীশকে কাছ ছাড়া করেননি ডিম্পল। কাজ সামলে দিনরাত নীতীশের চিকিৎসা, সেবায় সময় দিতেন তিনি। কেমোথেরাপি চলার সময়ই একদিন ডিম্পলকে বিয়ের প্রস্তাব দেন নীতীশ। ডিম্পলও ‘হ্যাঁ’ বলতে দু’বার ভাবেননি। ২০১৭ সালে এমবিএ পাঠ চুকে যাওয়ার পরে দু’জনের পরিণয় সম্পন্ন হয়।

 

কিন্তু বিয়ের পরের কয়েক মাসে স্বাস্থের আরও অবনতি হতে থাকে নীতীশের। তখন ক্যান্সারের স্টেজ ফোর। চাকরি থেকে বিরতি নিয়ে স্বামীকে নিয়ে মার্কিন মুলুকে যান ডিম্পল। কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন বিশেষ কিছুই আর করার নেই। ২০১৮ সালের মার্চে মৃত্যু হয় নীতীশের। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ক্যান্সার গবেষক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করতে করতে একজন ক্যান্সার আক্রান্তের জন্য যে যে চিকিৎসা লাগে তা আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন ডিম্পল। মুম্বই ফিরে এসেই খোলেন ‘লাভ হিলস ক্যানসার’ সংগঠন। বিদেশ থেকে নানা কাউন্সিলিংয়ের কোর্স করেন। শুরু হয় ‘লাভ হিলস ক্যানসার’ এর লড়াই। এখন ডিম্পলের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে বিশ্বব্যাপী ৫০ জন বিশেষজ্ঞ কাজ করেন। ক্যান্সার আক্রান্তদের ডায়েট থেকে ফিটনেস ট্রেনিং, কাউন্সেলিং থেকে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে তাঁদের চিকিৎসার খরচ যোগানোর কাজ করে চলেছেন ডিম্পল। তাঁর কথায়, আশা ছাড়তে নেই। জীবনের প্রতি সদর্থক ভাবনা থেকে কঠিন থেকে কঠিনতম বাধাও পার করা যায়।

Comments are closed.