CAB-র পর NRC: শুধু নিজের নয়, পূর্বপুরুষের নথি লাগবে আপনার নাগরিকত্ব প্রমাণে, দেখে নিন কী নথি যোগাড় করতে হবে

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার বলছেন, সারা দেশে NRC হবে। সময়সীমা নির্দিষ্ট করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ২০২৪ সালের মধ্যে NRC হবে গোটা দেশে। তবে তার আগে হবে লাগু হবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা CAB। এই দুই আইনের মধ্যে দিয়ে নির্দিষ্ট করা হবে দেশের নাগরিকের সংখ্যা।
আর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং এনআরসি (Documents Required For NRC) চালু হলে নাগরিকত্ব প্রমাণে সাধারণ মানুষকে কী কী তথ্য-প্রমাণ সরকারের কাছে জমা করতে হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-জল্পনা।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, বাংলায় এনআরসি লাগু হলে ঠিক কী ধরনের কাগজপত্র দেখাতে হতে পারে আপনাকে।
বাংলায় NRC হবেই, একথা অমিত শাহ থেকে দিলীপ ঘোষ, বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা বারবার বলছেন। কিন্তু নাগরিকপঞ্জির ভিত্তি বছর কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ফলে ঠিক কোন বছর থেকে আপনাকে নথি খুঁজতে হবে, তাও পরিষ্কার নয়।
ভিত্তি বছর স্পষ্ট হওয়ার পর আপনাকে সেই সময়ের নথি দিয়ে প্রথম প্রমাণ করতে হবে, আপনার পূর্বপুরুষ ওই ভিত্তিবর্ষের সময় নাগরিক তালিকায় ছিলেন। অথবা তার আগে আপনার পূর্বপুরুষ এ দেশের বাসিন্দা ছিলেন। তার জন্য ভিত্তিবর্ষের আগের জমির নথি, ব্যাঙ্কের খাতা, জন্ম শংসাপত্র জমা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, জমা দেওয়া নথি যাঁর নামে আছে, তাঁর সঙ্গে আপনার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, তা প্রমাণ করতে হবে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরা যাক, আপনার বাবার নাম ১৯৫১ সালের নাগরিকপঞ্জিতে আছে, তার প্রমাণ দিলেন। এবার প্রমাণ দিতে হবে আপনি বাবার সন্তান। সে জন্য আপনাকে জমা করতে হবে নিজের জন্মের সার্টিফিকেট। অথবা, আপনার নিজের বার্থ সার্টিফিকেট রয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনার নাগরিকত্বের জন্য প্রমাণ করতে হবে, আপনার বাবা এবং মা এ দেশের নাগরিক ছিলেন। অর্থাৎ, NRC র ক্ষেত্রে প্রত্যেকের নাগরিকত্বের জন্য শুধু নিজের নয়, বংশলতিকার (Family Tree) তথ্য জমা দিতে হবে সরকারের কাছে।

দেখে নিন, অসম NRC-র ক্ষেত্রে কী নথি চাওয়া হয়েছিল (Documents Required For NRC)
১. ১৯৫১ সালের নাগরিকপঞ্জিতে নাম
২. ভিত্তিবর্ষে (অসমের ক্ষেত্রে ১৯৭১) ভোটার তালিকায় নাম
৩. ওই সময়ের আগের জমি বা বাড়ি ভাড়ার রসিদ
৪. ওই সময়ের আগের নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট
৫. ওই সময়ের আগের স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ
৬. ওই সময়ের আগের ভারতীয় পাসপোর্ট
৭. ওই সময়ের আগের এলআইসি-র কাগজ
৮. ওই সময়ের আগের কোনও সরকারি সার্টিফিকেট বা লাইসেন্স
৯. ওই সময়ের আগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট বা কোর্ট অর্ডার
১০. ওই সময়ের আগের সরকারি চাকরির সার্টিফিকেট
১১. ওই সময়ের আগের রিফিউজি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
১২. ওই সময়ের আগের ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্ট ডিটেলস
১৩. ওই সময়ের আগের জন্ম সার্টিফিকেট
১৪. ওই সময়ের আগের কোর্ট রেকর্ড বা আদালতের নথি

অসমের ক্ষেত্রে এর কোনওটাই যাঁরা দেখাতে পারেননি কিংবা যাঁদের নামের বানানে ভুল বা অন্য কোনও ভুল বা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে, তাঁদের সবাইকে নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অসমের মতোই কি নথি প্রয়োজন হবে গোটা দেশে NRC চালু হলে? নাকি তার জন্য নয়া বিধি করবে ভারত সরকার। কিন্তু যাই হোক, নাগরিকত্ব প্রমাণ করার জন্য শুধুমাত্র আজকের প্রজন্মের হাতে যে তথ্য রয়েছে তাই যথেষ্ট নয়, দরকার পড়বে আপনার পূর্বপুরুষদের নথিও। এবং তা নির্ভর করছে কেন্দ্র কোন সময়টাকে ভিত্তিবর্ষ বলে চিহ্নিত করবে তার ওপর।

Comments are closed.