নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল চালু হলে কোন নথি দিয়ে প্রমাণ করবেন আপনি ভারতীয়? কী নথি জমা করতে হবে সরকারের কাছে?
মোদী সরকার ২০১৬ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (citizenship amendment bill) প্রথম লোকসভায় আনে। কিন্তু তা পাশ করাতে পারেনি। সোমবার নতুন করে সেই বিল পেশ হল লোকসভায়।
এই বিল অনুযায়ী, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা অ-মুসলিমরা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য হবেন না। ৫ বছর এদেশে থাকার পর তাঁরা ভারতের নাগরিকত্বের জন্য বিবেচিত হতে পারবেন। অর্থাৎ, এই দেশগুলো থেকে আসা কোনও ব্যক্তি যদি মুসলিম হন তাহলে তিনি এই ছাড় পাবেন না। তাঁকে অবৈধ অভিবাসী বা অনুপ্রবেশকারী হিসেবেই গণ্য করবে ভারত সরকার।
নাগরিকত্ব প্রমাণে কী নথি লাগবে?
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অনুযায়ী আইন লাগু হলে, এ দেশের নাগরিকত্ব প্রমাণে ভারতের আদি বাসিন্দাদের ১৯৪৮ সালের ১৯ জুলাইয়ের আগের জমির দলিল জমা করতে হবে। যাঁরা পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্থান থেকে এ দেশে ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে এসেছেন, তাঁদের কাছে থাকতে হবে ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট। যে দেশ থেকে চলে এসেছেন সেই দেশের স্থানীয় থানায় করা এফআইআরের কপি। ধর্মীয় অত্যাচারের কারণেই তিনি সেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, তা সেখানকার পুলিশি রেকর্ডে থাকতে হবে। তা না থাকলে তাঁর উপর হওয়া অত্যাচারের বিবরণ সম্বলিত সংবাদপত্রের প্রতিবেদন জমা করতে হবে।
অ-মুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব পেতে প্রমাণ দিতে হবে, তিনি ধর্মীয় অত্যাচারের কারণে সে দেশ (পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্থান) থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই প্রসঙ্গ আরও পরিষ্কার হবে একটি ছোট উদাহরণ দিলে। ধরা যাক, কেউ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এ দেশে এসেছিলেন ১৯৬৫ সালে। ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে ৫৪ বছর আগে তিনি সে দেশ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হন।
এ বছর জানুয়ারিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি সংসদে রিপোর্ট পেশ করে। সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নাগরিকত্ব আবেদনের সত্যতা যাচাই করা হবে কী করে? সরকার পক্ষের তরফে সেই সময় জবাব দেওয়া হয়, এ দেশে আসার আগেই যে উদ্বাস্তুরা যেখান থেকে এসেছেন (পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্থান) সেখানকার প্রশাসনকে জানিয়ে রেখেছেন যে, যাঁরা অত্যাচারিত হয়ে পালিয়ে এসেছেন এবং যাঁদের লং টার্ম ভিসা দেওয়া হয়েছে, শুধুমাত্র তাঁরাই এই আইনের আওতায় সুবিধা পাবেন। নতুন করে যাঁরা নিজেদের অত্যাচারিত হওয়ার ইতিহাস জানাবেন, তাঁদের মামলাগুলো আইবি এবং র তদন্ত করে দেখবে।
যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্যরা আইন মন্ত্রককে প্রশ্ন করেছিলেন নাগরিকত্ব সংশোধনীর (citizenship amendment bill) মাধ্যমে কতজন নাগরিকত্ব পাচ্ছেন? কেন্দ্রের জবাব ছিল, ৩১,৩১৩ জন। তাদের মধ্যে ২৫,৪৪৭ জন হিন্দু, ৫,৮০৭ জন শিখ, ৫৫ জন খ্রিস্টান, ২ জন করে বৌদ্ধ এবং পার্সি।
Comments are closed.