সন্ত্রাস নিয়ে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা ট্রাম্পের, ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন মোদীকে

ভারতে সফরে এসে সন্ত্রাস প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার গুজরাতের মোতেরায় সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়ামে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান সরকারকে কড়া পদক্ষেপ করতেই হবে। সেইসঙ্গে ভারতীয় উপামহাদেশে সন্ত্রাস দমনে ভরতের সঙ্গে হাত হাত মিলিয়ে আমেরিকা কাজ করবে বলে আশ্বাস মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
সোমবার স্ত্রী মেলানিয়া, কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাতা জ্যারেড কুশনারকে নিয়ে ভারতে পৌঁছন ট্রাম্প। প্রথমে সস্ত্রীক ট্রাম্প সবরমতি আশ্রম পরিদর্শন করেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্প দম্পতিকে বুঝিয়ে দেন, কেমন করে চরকা কাটা হয়। আশ্রমের এক মহিলা কর্মীর সাহায্যে ট্রাম্প এবং মেলানিয়া চরকা কাটার চেষ্টা করেন। খালি পায়ে আশ্রম পরিদর্শন থেকে শুরু করে গান্ধীজির স্মৃতিবিজড়িত চরকায় হাত দিলেও সবরমতী আশ্রমের ভিজিটর্স বুকে গান্ধীজির জন্য একবর্ণ না লিখে ‘বন্ধু’ মোদীর প্রশস্তি করে ট্রাম্প লেখেন, এই অভূতপূর্ব সফরের জন্য আমার মহান বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ। তাতে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও সই করেন।
সবরমতি থেকে সোজা মোতেরা স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, প্রত্যেক দেশের অধিকার রয়েছে তার দেশের সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখার। ভারত ও আমেরিকা প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস দমনে কাজ করে চলেছে বলে জানান ট্রাম্প। ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভারতের ভূয়সী প্রশংসা করেন ট্রাম্প। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রশস্তি করে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী রয়েছে ভারতে। এ দেশের ঐক্য ও সংহতি সারা বিশ্বের কাছে একটা নজির রেখেছে। সেই সঙ্গে তিনি জানান, ভারতের সঙ্গে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি করছে আমেরিকা। দু’ দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও উন্নত হবে বলে আশাবাদী তিনি। শুধু বাণিজ্যিক চুক্তি, প্রতিরক্ষার তারিফই নয়, ভারতীয় প্রতিভার উচ্ছশিত প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রতিভায় পরিপূর্ণ এ দেশ। ট্রাম্পের মন্তব্যে উঠে আসে ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকর ও শাহরুখ- কাজল অভিনীত হিন্দি সিনেমা ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’র কথা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে অন্যকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। দু’জনের মধ্যে যেন প্রশংসার প্রতিযোগিতা চলে।  ট্রাম্প বলেন, মোদীর নেতৃত্বে দেশের গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, ঘরে ঘরে রান্নার গ্যাস কানেকশন হয়েছে, বিশাল সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বন্ধু নরেন্দ্র মোদীর জন্য আমি গর্বিত। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে মোদী দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন। পরিশ্রমের মাধ্যমে যে সব করা যায় তা প্রমাণ করে দিয়েছেন ‘বন্ধু’ মোদী।
আর ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে মোদী জানালেন, ভারত আর আমেরিকা শুধু অংশীদার নয়, এ সব ছাপিয়ে দু’দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বলেন, পাঁচ মাস আগে হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। আর আজ মোতেরায় ট্রাম্প এসে নয়া ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। সন্ত্রাস মোকাবিলায় একে অন্যের সঙ্গী হয়েছে ভারত ও আমেরিকা। ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতি আমেরিকার সামনে বিনিয়োগের আরও বিশাল সুযোগ তৈরি করে দেবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
মোতেরা থেকে সূর্যাস্তের তাজমহল দেখতে আগ্রা চলে যান সস্ত্রীক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাজমহল দেখে বিস্মিত হন ট্রাম্প দম্পতি। তারপর দিল্লি যাত্রা। আমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে সবরমতি আশ্রম হয়ে মোতেরা স্টেডিয়াম পর্যন্ত যাত্রাপথে রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার মানুষের ভিড় ছিল। স্টেডিয়ামেও ছিল উপচে পড়া ভিড়।

Comments are closed.