গত ৫ বছরের মধ্যে এবার জুন মাস শুষ্কতম, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টির ঘাটতি না মিটলে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা
গত ৫ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালে সবচেয়ে শুষ্ক জুন মাস কাটল ভারতে। এর মূল কারণ বৃষ্টিপাতে ভয়াবহ ঘাটতি। রবিবার আবহাওয়া দফতরের জানানো এই তথ্যেই এখন কপালে ভাঁজ দেশের অর্থনীতিবিদদের। তাঁদের আশঙ্কা, শুষ্ক জুনের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে কৃষিপ্রধান অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল ভারতে।
এখনও পর্যন্ত দেশে গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়েও কম বৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় এই পরিমাণ আরও কম। হাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশে কেবলমাত্র জুন মাসেই ৬১ শতাংশ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি তৈরি রয়েছে।
কৃষিপ্রধান ভারতের অর্ধেকের বেশি জমিতেই চাষবাসে এখনও একমাত্র ভরসা বৃষ্টিপাত। এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতের, তার ১৫ শতাংশই আসে কৃষি থেকে। কিন্তু জুন মাসে বৃষ্টিপাতে রেকর্ড ঘাটতির জের সরাসরি প্রভাব ফেলবে দেশের অর্থনীতিতে, ব্যাহত হতে পারে বৃদ্ধির হার, আশঙ্কা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের।
মৌসুমী বায়ু সাধারণত পয়লা জুলাইয়ের মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মৌসম ভবন জানিয়েছে, এবছর পয়লা জুলাই পর্যন্ত বর্ষা পৌঁছেছে দেশের দুই-তৃতীয়াংশেরও কম এলাকায়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভারতের কৃষিক্ষেত্রে নজিরবিহীন বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে। দেশ যেখানে গতবারের খরা পরিস্থিতি থেকেই এখনও বেরোতে পারেনি, সেখানে এবছর বৃষ্টিপাতে ঘাটতি, পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণত পয়লা জুন কেরল উপকূল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে বর্ষা। কিন্তু এবার সেখানে পৌঁছতে বর্ষার লেগেছে আরও এক সপ্তাহ। শেষ পর্যন্ত ৮ ই জুন কেরল উপকূলে বর্ষা পৌঁছয়, কিন্তু তারপর আরব সাগরে তৈরি হওয়া সাইক্লোন ‘বায়ু’ মৌসুমী বায়ু থেকে আদ্রতা টেনে নিয়ে দেশে বর্ষার গতিপথকে আরও বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর। এর ফলে শুরুতেই দুর্বল হয়ে পড়ে মৌসুমী বায়ু।
মূলত দেশের অধিকাংশ তুলো, সোয়াবিন এবং ডাল শস্যের চাষ হয় পশ্চিম এবং মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায়। জুলাই মাসের প্রথমার্ধে এই অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উত্তর ভারতে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হবে বলে হাওয়া অফিস সূত্রে খবর। আবহাওয়া দফতরের এক কর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাতের চিত্রে উন্নতি হবে কিন্তু পশ্চিম এবং মধ্য ভারতে বৃষ্টিপাত হবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। সব মিলিয়ে জুলাই মাস পর্যন্ত ভারতে গড়ের চেয়েও রেকর্ড কম বৃষ্টি নথিভুক্ত হয়েছে। জুন মাসে বৃষ্টিপাতের ঘাটতির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ। যা গত ৫ বছরে সর্বোচ্চ।
২০১৪ সালের জুন মাসে ভারতে ৪২ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত নথিভুক্ত হয়েছিল। আর জুন থেকে সেপ্টেম্বর অর্থাৎ ভরা বর্ষার মরসুমে সেই ঘাটতির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছিল ১২ শতাংশে।
এই হিসেব থেকেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ৫ বছরে শুষ্কতম জুনের ঘাটতি পুরোপুরি মেটানো না গেলেও বৃষ্টিপাতে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ অনেকটাই কমানো সম্ভব। কিন্তু সেজন্য দরকার পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত। আর দুর্বল বর্ষার প্রথম আঘাত এসে পড়েছে কৃষি ব্যবস্থায়। রয়টার্সের প্রতিবেদনে প্রকাশ, গত ২৮ শে জুন পর্যন্ত দেশের মাত্র ১৪.৭ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে ফসল বুনতে পেরেছেন দেশের কৃষকরা। যা গতবারের তুলনায় ১০ শতাংশ কম।
মে মাসের একেবারে শেষ দিকে হাওয়া অফিস জানিয়েছিল দেশে এবছর স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু দেশের একমাত্র বেসরকারি আবহাওয়া প্রতিষ্ঠান স্কাইমেট জানিয়েছিল, দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হবে।
ইতিমধ্যেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মুম্বইয়ে। অথচ বৃষ্টির দেখা নেই মারাঠাওয়াড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। চাষের খেত ফুটিফাটা। নদী-নালা-খাল-বিল শুকিয়ে গিয়েছে। পাম্প করে ভূগর্ভস্থ জল তোলার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ার কারণে পাম্পেও জল উঠছে না। ফলে ফসল বোনা তো দূর অস্ত, নিজের চেষ্টা মেটাতেই এখন সরকারি ট্যাঙ্কারের লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে মহারাষ্ট্রের মারাঠাওয়াড়ার কৃষকদের। একই অবস্থা চেন্নাই সহ বিভিন্ন মহানগরে। পানীয় জলের হাহাকার দেশজুড়ে। এই অবস্থায় দেশের নজর আকাশ পানে।
Comments are closed.