মহারাষ্ট্রের বিদর্ভে ভয়াবহ খরা পরিস্থিতি, প্রায় ৩ লক্ষ গাছ কেটে মুম্বই-নাগপুর এক্সপ্রেসওয়ে বানাচ্ছে সরকার
ভয়াবহ খরায় ধুঁকছে মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকা। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা বিদর্ভ এবং মারাঠাওয়াড়া এলাকায়। সামান্য একটু জলের আশায় রাত থাকতে ট্যাঙ্কারের লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন জলাধারে জলের পরিমাণ এসে ঠেকেছে মাত্র ৫ শতাংশে। অভূতপূর্ব কৃষি বিপর্যয়ের আশঙ্কা। পরিবেশবিদরা বলছেন অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন এবং যথেচ্ছ সবুজ নিধনের ফল ভোগ করছেন মহারাষ্ট্রের এই এলাকার বাসিন্দারা। এরই মধ্যে ফের বিতর্ক দানা বেঁধেছে সরকারি প্রকল্পের কাজ ঘিরে। যেখানে ২ লাখেরও বেশি গাছ কেটে তৈরি হচ্ছে মুম্বই-নাগপুর সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ে। ৭০১ কিলোমিটার দীর্ঘ সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ে যাবে মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ এলাকা দিয়ে। যে এলাকা ইতিমধ্যেই ভয়াবহ খরার মুখে। সবুজ নিধন যজ্ঞ জারি রেখে কীভাবে খরা মোকাবিলা করা যাবে? বিদর্ভবাসীর এই প্রশ্নেই এখন জবাব হারাচ্ছেন দ্য মহারাষ্ট্র স্টেট রোড ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনের (এমএসআরডিসি) আধিকারিকরা।
গত ৩ রা জুন মুম্বইয়ে এক রিভিউ বৈঠকে এমএসআরডিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭০১ কিলোমিটার দীর্ঘ সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে মোট ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫০ টি গাছ কাটা পড়বে। তার মধ্যে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৭৪৪ টি গাছ ইতিমধ্যেই কাটা পড়েছে। বাকি গাছ কাটার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে বলে রিভিউ বৈঠকে জানানো হয়েছে। সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হয়ে গেলে, এলাকার অর্থনৈতিক মানচিত্রই বদলে যাবে বলে জানাচ্ছেন সরকারি আধিকারিকরা।
কিন্তু উন্নয়নের এই পথ নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদ থেকে সাধারণ মানুষ। বন্যা কিংবা খরার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে ত্বরাণ্বিত করছে অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন এবং নির্বিচার বৃক্ষ নিধন। এই অবস্থায় রাস্তা তৈরি করতে খরা প্রবণ এলাকায় বিপুল পরিমাণ গাছ কাটার কী সাংঘাতিক প্রভাব পরিবেশের উপর পড়বে, তা নিয়ে প্রবল আশঙ্কায় স্থানীয় মানুষ থেকে পরিবেশবিদরা। সবুজ বাঁচানোর আন্দোলনের প্রথম সারির সৈনিক জ়োরু ভাথেনা বলছেন, যখন খরার প্রকোপে বিদর্ভের গলা শুকিয়ে কাঠ, তখন উচিত ছিল সবুজায়নের পথে যাওয়া। ভাথেনার অভিযোগ, উন্নয়নের নেশায় মত্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মাথায় তা ঢুকছে না। নির্বিচারে সবুজ ধ্বংস করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। বিদর্ভ এলাকাকে পাকাপাকিভাবে মরুভূমি তৈরির প্রয়াস এবার সম্পূর্ণ হল, মন্তব্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বনশক্তির অন্যতম কর্মী ডি স্ট্যালিনের।
গাছ কাটার অভিযোগ মেনে নিলেও পাল্টা ৮ লক্ষ নতুন গাছ লাগানোর কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকার। যদিও সরকারি আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না রাত থাকতে জলের লাইনে দাঁড়ানো বিদর্ভের অসংখ্য সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ, এভাবে গাছ কাটার পর নতুন গাছ লাগানোর অর্থ হল, সবুজায়নকে অন্তত ২০ বছর পিছিয়ে দেওয়া। আর জ়োরু ভাথেনা বলছেন, যদি মেনেও নিই সরকার প্রতিশ্রুতি পালন করে গাছ লাগাবে, কিন্তু পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছ কেটে ফেলে তার জায়গায় গাছের চারা লাগানোর অর্থ কী? তাঁর প্রশ্ন, পূর্ণ বয়স্ক গাছের অভাব কি চারা গাছ পূরণ করতে সক্ষম?
মুম্বই-নাগপুর সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ। কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে ১৬ টি জায়গায়। ২০২১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
Comments are closed.